ঢাকা, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ || ১১ বৈশাখ ১৪৩১
Breaking:
রাঙ্গামাটির সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে ছয়জন নিহত, আহত-৭      কক্সবাজারে ভোটার তালিকায় থাকা রোহিঙ্গাদের তালিকা চেয়ে হাইকোর্ট আদেশ     
Mukto Alo24 :: মুক্ত আলোর পথে সত্যের সন্ধানে
সর্বশেষ:
  বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে মরিশাসের প্রতি আহ্বান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর        মন্ত্রী-এমপি’র স্বজনরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে ব্যবস্থা: ওবায়দুল কাদের        থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা     
৭৪৩

ভুট্টোর নাতির সফর!:অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

মুক্তআলো২৪.কম

প্রকাশিত: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২  

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল):
কিছু কিছু মানুষ আছে যারা উদারতা আর বাধ্যবাধকতা ভেদাভেদটা বোঝেন না। ধরুন কেউ আপনার দফতরে এসে তার কার্ডটি ভেতরে পাঠালেন আর আপনিও ভদ্রতার তাগিদে ভদ্রলোকের প্রতি ভদ্রতাপরবশ হয়ে তাকে ভেতরে ডেকে নিলেন। আমার অভিজ্ঞতা বলে, অনেক সময়ই এই ডেকে নেয়াটা কাল হয়ে দাঁড়ায়। কারণ আপনি যাকে ডেকে নিলেন, তার এক ধরনের ধারণা জন্মায় যে, তিনি ‘যার পর নাই গুরুত্বপূর্ণ বিধায়’ আপনি ভয় পেয়েই তাকে ডেকে নিয়েছেন।

॥ দুই ॥
সম্প্রতি বন্যায় ডুবেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের বানভাসি মানুষের দুর্দশার ছবি এখন সাড়া দুনিয়ায় মিডিয়ার হেডলাইন। এমনকি এদেশের টিভি চ্যানেলগুলো খুললেও সেই একই দৃশ্য। ক’দিন আগের একটি খবর। পাকিস্তানের বন্যাপীড়িতদের জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকার সাহায্য ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। বিষয়টি অবশ্য উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। ক’দিন আগেই প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কাকে অর্থনৈতিক মেল্টডাউন থেকে উদ্ধার করতে ঋণ সহায়তা দিয়েছিল বাংলাদেশ। পরিস্থিাতি খারাপ হওয়ায় বাড়ানো হয়েছে সেই ঋণ পরিশোধের মেয়াদ। অথচ যাদের ঋণের চাপে আজকে শ্রীলঙ্কার এই চিড়ে-চ্যাপ্টা দশা, তারা সময়মতো এই উদারতাটুকু দেখালে দেশটার পরিস্থিাতি এমন নাজুক নাও হতে পারত। সে অন্য প্রসঙ্গ। এই ক’দিন আগেও মালদ্বীপ সফরে গিয়েও সে দেশকে একাধিক সাঁজোয়া যান উপহার দিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। আর কোভিডকালীন সময়ে তো আমাদের বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত হয়েছিল ঘরের পাশের ভারত আর চীনকে ছাপিয়ে এমনকি সাত সাগরপাড়ের মার্কিন মুলুকেও।
॥ তিন ॥

পাকিস্তানকে বন্যার্তদের জন্য দেড় কোটি টাকা সাহায্যকে যারা সামান্য ভাবছেন তাদের জন্য আরেকটি খবর। মাত্রই আমাদের হাইকোর্ট দেশের বিহারী ক্যাম্পগুলোতে বিনাপয়সায় বিদ্যুত সরবরাহের ওপর আপত্তি জানিয়েছেন। কারণটা কিছুই না। এই ক্যাম্পগুলোতে এই পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক কোটি টাকার বিদ্যুত বিনামূল্যে সরবরাহ করেছে বাংলাদেশ সরকার। সঙ্গত কারণেই হাইকোর্ট মনে করেছে ‘এনাফ ইজ এনাফ’। আর মাত্র দেড় কোটি টাকার সাহায্য নিয়ে পাকিস্তানের দুর্দশাপীড়িত মানুষগুলোর পাশে বাংলাদেশের এই দাঁড়ানোকেও খাটো করে দেখার কিছু নেই। কারণ মনে রাখতে হবে, আমরা তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছি তাদের পূর্বসূরিদের হাতে আমাদের ত্রিশ লাখ পূর্বসূরির হত্যা আর তিন লাখ পূর্বসূরির সম্ভ্রমহানির ব্যথাকে পাথরচাপা দিয়েই।

॥ চার ॥

এমন ছোট ছোট আরও কিছু ঘটনা আমাদের আশপাশে প্রায়ই ঘটে, যা আপাতদৃষ্টিতে ছোট বলে আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে গেলেও, এসবের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য অনেক গভীর। গত দুই বছরে করাচীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে দু-দুটি ‘পাকিস্তান-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মেলন’। এসব সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন এদেশীয়রাও, যদিও তাদের নাম মিডিয়ায় আসেনি। তবে পাকিস্তানের সব ক’টি প্রধান-অপ্রধান রাজনৈতিক দল তাদের সবধরনের ছোট-বড় ভেদাভেদ ভুলে অংশ নিয়েছে এই সম্মেলনগুলোয়। মিডিয়ায় চাউর রয়েছে এসব সম্মেলনে অর্থলগ্নী করেছেন লন্ডনে পলাতক এদেশের একজন দন্ডপ্রাপ্ত রাজনীতিবিদ। এই সম্মেলনগুলোতে দাবি জানানো হয়েছে পিটিভির বাংলা চ্যানেল চালুর আর এমনকি পাক-বাংলা যুক্তরাষ্ট্র গঠনেরও!

॥ পাঁচ ॥

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সমাপনী উৎসবে বাণী পাঠিয়েছিলেন পাকিস্তানের সদ্য গদিচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নিয়াজি। বাণীটিতে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে সম্বোধন করা হয়নি। বঙ্গবন্ধুর নামের বানান ‘মুজিব উর রহমান’ লেখার ধৃষ্টতাও দেখিয়েছিলেন নিয়াজি তার সেই বাণীতে। সে সময়টায় এমনও শোনা গিয়েছিল যে, বাংলাদেশের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন একজন ইউরোপীয় রাষ্ট্রপ্রধানকে সঙ্গে করে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দিতে ঢাকায় এসে হাজির হতেও পারেন ইমরান। দেশের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির আপত্তির মুখে শেষ পর্যন্ত সেই দুঃসাহস অবশ্য দেখাননি তিনি। কিন্তু প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরকে কলঙ্কিত করার জন্য সেসময়টায় দেশজুড়ে নজিরবিহীন তা-ব চালিয়েছিল পাকিস্তানের আজ্ঞাবহ দেশীয় মৌলবাদী সম্প্রদায়। আর হালে ঢাকায় খেলতে এসে মাঠে পতাকা উড়িয়ে পাকিস্তানের ক্রিকেট টিমের প্র্যাকটিস সেশন কিংবা ঢাকার পাকিস্তানী হাইকমিশনের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের পতাকার অদ্ভুত ফিউশনের ছবি প্রকাশের কথা তো এখনও আমাদের স্মৃতিতে জাজ্বল্যমান।

॥ ছয় ॥

ক’দিন আগে পাকিস্তান থেকে কম্বোডিয়ায় যাওয়ার পথে চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক অনির্ধারিত যাত্রাবিরতি করেছেন পাকিস্তানের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো। যার আরেক পরিচয়, তিনি সেই জুলফিকার আলী ভুট্টোর দৌহিত্র, যিনি সরাসরি দায়ী একাত্তরে ত্রিশ লাখ বাঙালীর নিধন আর তিন লাখ বাঙালী বিরঙ্গনার সম্ভ্রমহানির জন্য। খবরটি এদেশের বা ওদেশের মিডিয়ায় কোথাও তেমনভাবে উঠে আসেনি। আমিও জেনেছি আমার এক প্রবাসী বন্ধুর মারফত। যখন ঢাকা থেকে বিমান বিনা স্টপেজে সোজা উড়াল দিচ্ছে সুদূর কানাডার টরন্টোতে, তখন আমরা খুব ভালই বুঝি যে, ইসলামাবাদ থেকে নমপেন যাওয়ার পথে বিমানে তেল ভরার অজুহাতে ভুট্টোর নাতির চট্টগ্রামে অবতরণ কোন সাধারণ ঘটনা নয়। এর পেছনে নিশ্চয়ই কোন না কোন উদ্দেশ্য আছে। আর গত মাসের শুরুতে বিলাওয়ালের সেই সফরের পর থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ছুতায় দেশজুড়ে আবারও অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করায় সাবেক আইএসআই কর্মকর্তা টার্নড বাংলাদেশের প্রথম উর্দিপরা রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমানের আজকের শিষ্যদের যে প্রাণান্ত প্রয়াস, তা থেকে এ কথা বুঝতে আর কারও বাকি থাকে না যে, এদেশে আরেকটি জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পাকিস্তানী ভাবধারার রাজনীতির পালে নতুন হাওয়া তুলতেই ভুট্টোর নাতির এই সংক্ষিপ্ততম বাংলাদেশ সফর!

॥ সাত ॥

ভুট্টোর নাতিকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে স্বাগত জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের একজন মন্ত্রী। মন্ত্রী মহোদয় পরে জানিয়েছেন, সে সময়ে তিনি চট্টগ্রামে অবস্থাান করছিলেন বিধায় রাষ্ট্রীয় ভদ্রতার তাগিদেই তাকে সেখানে হাজিরা দিতে হয়েছিল। বিষয়টি রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচারের অংশ। মন্ত্রী রাষ্ট্রের সরকারের অংশ। কাজেই রাষ্ট্রীয় কারণে অনেক ঢেঁকিই যে তাকে গিলতে হয়, এটুকু আমরা ভালই বুঝি। সমস্যা হচ্ছে, ওই মানুষগুলোকে নিয়েই যারা ভদ্রতার সঙ্গে ভীতির যে যোজন যোজনের ফারাক, তা বুঝতে না পেরে ভদ্রতা আর ভীতিকে গুলিয়ে বসে। বিলাওয়ালরা অবশ্য এসব ভালই বোঝেন। যেমন বুঝতেন তার প্রয়াত মাতামহও। সে কারণেই অনেকটা জোর করেই তেল নেয়ার ছুতায় বিলাওয়ালের বিমানের চট্টগ্রামের অবতরণ। কারণ, তিনি জানেন ছোট্ট এই ঘটনাটি ছোট বলে অনেকের দৃষ্টির অগোচরে থেকে গেলেও তা তার সফর পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহকে প্রবাহিত করবে নানাভাবেই। এখন আমরা সেটি বুঝলেই ভাল!

লেখক : ডিভিশন প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন,  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ





মুক্তআলো২৪.কম

আরও পড়ুন
পাঠক কলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত