ঢাকা, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
Breaking:
ঢাকা ও ব্যাংকক পাঁচটি দ্বিপাক্ষিক নথি স্বাক্ষর করেছে     
Mukto Alo24 :: মুক্ত আলোর পথে সত্যের সন্ধানে
সর্বশেষ:
  দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী আহ্বান        বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী     
২৪১৯

কয়েছ আহমদ বকুল এর কলাম-

`শামীম আইভী বিতন্ডা আমাদের মিডিয়া ও অসহায় আইন`

যুক্তরাজ্য থেকে কবি, লেখকঃ কয়েছ আহমদ বকুল

প্রকাশিত: ১৪ আগস্ট ২০১৪   আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪

একটি হত্যাকান্ড হয়ে গেলো, সাত জন মানুষ কে দিনে দুপুরে উঠিয়ে নিয়ে গেলো আইন শৃংখলা বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের সদস্যরা  অতঃপর মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞের শিকার হলো তাঁরা। কি করলাম আমরা, মানুষ হিসাবে আসলে কি করা উচিৎ ছিলো আমাদের? টিভি তে নিউজ দেখলাম একটু আহ ইস করলাম এবং আবার নতুন করে নতুন দিনের শুরু! যে সাতটি পরিবার তাঁদের আপনজন হারালো তাঁদের বুকের উপর দিয়ে দীর্ঘশ্বাস রুপে কি ভয়ঙ্কর তুফানটি বয়ে যাচ্ছে তা দেখার অবকাশ হয়তো বা আমাদের এখন আর নেই।

নারায়নগঞ্জের সাত খুন গঠনা আমরা ভুলতেই বসেছিলাম। একটি টিভি চ্যানেলের টক শো কে কেন্দ্র করে আবার সামান্য সময়ের জন্য আমাদের মগজের ফ্যাকেসে ক্যানভাসে সাত খুন, আবার আমরা ইস উফে মত্ত। সেদিনটি হয়তোবা খুব দূরে নয় যেদিন সাত থেকে সতেরতে যাবে সংখ্যা, যেদিন ভাগ্যাহত মৃতের তালিকায় থাকবেন আপনি আমি কিংবা আমাদের স্বজন পরিজন কেউ।

শামীম উসমান আমাদের দেশের, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহান জাতীয় সংসদের একজন সম্মানিত সদস্য। সাত খুন হত্যার সাথে সাথেই দুর্মুখের অসভ্য আঙ্গুল তাঁর দিকে উঠেছিলো। হত্যা গঠনার মূল হুতা নুর হুসেন শামীমের লোক বলেই আওয়াজ উঠাতে লাগলো বেকুব জনসাধারণ। আশ্চর্য্যের বিষয় এতো ক্ষমতাবান একজন মানুষকে কেন যে মানুষ শুধু শুধু সাত হত্যা মামলায় কল্পনা করতে লাগলো আমাদের বোধগম্য নয়। নিশ্চয়ই শামীম উসমান এই হত্যা গঠনার সাথে বা পরিকল্পনার সাথে কোন ভাবে জড়িত নয়, কিন্তু প্রসঙ্গক্রমে বা বিভিন্ন আলামত ও অবস্থা বিবেচনায় হত্যা গঠনার মূল আসামী নুর হোসেনের সাথে শামীম উসমানের ফোনালাপ সহ নানা রকম যোগাযোগের প্রমান  পাওয়া যায় সুতারাং তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহান সংসদে দাঁড়িয়ে উসমান পরিবারকে যে কোন মূল্যে রক্ষা করার ঘোষনা না দিলে কি হতো না। উনি তো অপরাধী নয়, কেন তবে উনাকে রক্ষায় সয়ং প্রধানমন্ত্রীকে মুখ খুলতে হলো।

সেলিনা হায়াৎ আইভী, মহিলা মানুষ। যদিও সাধারণ মানুষের সমর্থন সহযোগীতা নিয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জের সিটি মেয়র, তবুও মহিলা তো। চুর কে চুর খুনি কে খুনি বলার সৎ সাহস কি তাঁর থাকা উচিৎ। উনাকে একাত্তর টিভির টক শো`তে শামীম উসমানের সাথে বিতন্ডায় দেখা না গেলে উনার বিষয়ে এই কথা গুলো যে কেউ স্বাভাবিক ভাবেই ভাবতে পারেন। কিন্তু আসল সত্য তিনি মহিলা কি পুরুষ সেটা বিষয় নয় বিষয় হচ্ছে তিনি একজন সাহসী ও বলিষ্ঠ কন্ঠের মানুষ। আমাদের দেশ সমাজ বা এই সময়ে এরকম সাহসী মানুষের অভাব আছে বলতেই হবে। আইভীকে শ্রদ্ধা, এবং পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই উনাকে আমার প্রশ্ন সাত হত্যা মামলার এজহারভুক্ত আসামী নন শামীম উসমান, নারায়ণগঞ্জের সিটি মেয়র হিসাবে সাত হত্যা মামলায় গঠিত তদ্ন্ত কমিঠি উনাকে ডেকেছিলো, উনার বক্তব্য চেয়েছিলো, উনি সরাসরি শামীম উসমানকে হত্যা মামলার মূল পরিকল্পনাকারীদের একজন বলেন কিভাবে? যদি উনি এতোটাই নিশ্চিত তবে উনি কোন উদ্যোগ নিয়ে শামীম উসমানের বিরুদ্ধে মামলা করার ব্যবস্তা করেননি কেন?

শামীম উসমানের অনেক পরিচয়ের মধ্যে একটি হচ্ছে তিনি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আইভী হায়াতের সাথের পরাজিত প্রার্থী। মানে আইভী ও শামীম উসমান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। আমাদের দেশেতো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মধ্যে কাদা ছুঁড়াছুঁড়ি থাকেই। সরাসরি কোন মামলায় না গিয়ে শামীম উসমানকে কেবল অপরাধী বলে দাবী করার দুটি কারণ থাকতে পারে। এক, অপরাধী শামীম উসমানকে বাঁচানোর জন্যে রাজনৈতিক ভাবে হেয় করার ধুয়ো উঠানো দুই, নিরপরাধ শামীম উসমানকে রাজনৈতিক ভাবে হেয় করার চেষ্টা করা।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী হয়তোবা সংসদে উসমান পরিবারকে রক্ষা করার কথা বলে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারেননি, উসমান পরিবারের অন্যতম প্রধান সদস্য যখন দেশের সবচেয়ে মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত ঠিক সেই সময়ে তিনি এই ঘোষনা না দিলেও পারতেন। তবে আইন আদালতের মাধ্যমে শামীম উসমানকে অপরাধী প্রমানের চেষ্টা করাতে তো প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ  করবেন বলে মনে হয়না। সেই চেষ্টাটা শুরু করবে কে। শামীম উসমানকে বদনাম করে লাভমান হওয়ার ইচ্ছাটাই যদি মুখ্য না হয় তবে সেই চেষ্টার শুরু তো আইভীকেই করার কথা।

একাত্তর টিভির টক শো আমাকে বেশ খানিকটা আনন্দ দিয়েছে। আওয়ামীলীগ সরকার সম্প্রতি সম্প্রচার নীতিমালা প্রনয়ণ করেছে আর সেই নীতি মালার অন্যতম প্রধান নীতি `কাউকে ব্যক্তিগত ভাবে আক্রমণ করা যাবে না` তা স্বদর্পে লঙ্গন করেছেন তাদের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য শামীম উসমান। আইভীকে তো বলেছেনই, প্রখ্যাত সাংবাদিক গোলাম মর্তুজার সম্পর্কেও অনেক কিছু জানেন এবং বলবেন বলে হুমকি দেন জাতীয় সংসদের ঐ আইন প্রণেতা।

একাত্তর টিভি এরকম একটি আমোদে টক শো`র আয়োজন করে বেশ টি আর পি কামিয়েছে বলা যায় কিন্তু তদন্তাধীন একটি বিষয় নিয়ে এভাবে অপেন আলোচনার কোন সুযোগ আছে কিনা সেটাকি একবার ভেবছিলো তারা। আইভী শামীম এই মুহূর্তে পরস্পর বিরোধীতায় আক্রান্ত, আইন মানা না মানা তাঁদের জন্য বড় বিষয় নয়, আমাদের মিডিয়াও কি তাদের উদ্যত আচরণ ও অনুষ্টান দিয়ে আইনকে এভাবে অসহায় করে তুলবে? 

কয়েছ আহমদ বকুল
কবি লেখক
যুক্তরাজ্য

আরও পড়ুন
পাঠক কলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত