ঢাকা, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
Breaking:
আগামী ২৮ এপ্রিল খুলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বন্ধ থাকবে অ্যাসেম্বলি     
Mukto Alo24 :: মুক্ত আলোর পথে সত্যের সন্ধানে
সর্বশেষ:
  নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি        বিএনপি ক্ষমতায় আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছে : ওবায়দুল কাদের        বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর     
২৩৭০

কলাম-

`কেবল ব্যক্তিস্বার্থই ধ্বংস করছে একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দলকে`

যুক্তরাজ্য থেকে কবি, লেখকঃ কয়েছ আহমদ বকুল

প্রকাশিত: ২০ জুলাই ২০১৪   আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪

কয়েছ আহমদ বকুল

কয়েছ আহমদ বকুল

হুট করেই একেবারে ধ্বংসের দারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক সংঘটন বি এন পি। আদর্শগত কারণে বি এন পি হয়তোবা অনেকের প্রিয় রাজনৈতিক দল না হতে পারে, বি এন পির অনেক সিদ্ধান্ত বা কার্যক্রম অজনপ্রিয় অথবা কঠোর ভাবে সমালোচিত হতে পারে কিন্তু দলটি এভাবে নিশ্চিহ্ণ হয়ে যাক এমন কামনা করার মানুষের সংখ্যা মনে হয়না দেশ খোঁজে একজন ও পাওয়া যাবে।

বহুবার, বারবার এ দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতার অধিকারী ছিলো বি এন পি নামক জনপ্রিয় এই দলটি। বিরোধী দলে থেকেও দলটির সরকার বিরোধী আন্দোলনের প্রক্রিয়া ও কৌশল ছিলো প্রনিদান যোগ্য। অথচ ১/১১ পরবর্তী সময়ে আচমকাই ভেঙে পড়লো দলটির সকল স্তরের শৃংখলা। মূলত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একের পর এক ভুল ও অন্তসারশূন্য সিদ্ধান্তে এলোমেলো অগুছালো হয়ে পড়লো দলটি। অথচ দেশ সেরা প্রবীন ও প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদদের বড় একটা অংশ তখনো তাদের দলে ছিলো এখনো আছে।

অনেকে মনে করেন কেবল মাত্র দূর্নীতিই দলটির আজকের অবস্থার জন্য দায়ী। কিন্তু ধারনাটি কি সর্বাংশে সত্যি? বাংলাদেশের দূর্নীতি করা একমাত্র রাজনৈতিক দল কি বি এন পি? দূর্নীতির দাঁড়ী পাল্লায় ওজন করলে বর্তমান সরকারের চেয়ে বি এন পির ওজন কি খুব বেশী হবে? মনে হয়না দূর্নীতিই একমাত্র কারণ। বি এন পির আজকের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব এক দিনে সৃষ্টি হয়নি। নিজেদের মধ্যকার অনেক অভাব অনুযোগ জমতে জমতে আজ  মহিরুহ হয়ে এসে সামনে দাঁড়িয়েছে। প্রথম সারির নেতাদের দূরত্ব বাড়তে বাড়তে হয়ে গেছে সাতাল আরব। কিন্তু কেন?  বড় রাজনৈতিক দলে মতের অমিল  থাকতেই পারে, তাই বলে কি সেই মতানৈক্য দল ধ্বংস করার পরিস্তিতি সৃষ্টি করা বাঞ্ছনিয়? মাইনাস টু ফর্মুলা কার্যকর করতে যাঁরা প্রয়াসী ছিলেন তাঁদের ভূমিকা একটা কারণ হতে পারে কিন্তু এই জ্বালাতো আওয়ামীলীগের ঘরে আরো প্রকট। এই কারণে দল নিস্কৃয় হলে তো আওয়ামীলীগের অবস্থাও বি এন পির মতো হওয়ার কথা। ঠিক আছে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায়, তাদের বিষয়টা ভিন্ন মানলাম। কিন্তু এতোটাই কি ভিন্ন যে আওয়ামীলীগ ৫ জানুয়ারীর ভোটার বিহীন একটা নির্বাচন করে বহাল তবিয়তে রাষ্ট্র ক্ষমতা উপভোগ করে যাচ্ছে আর বি এন পি একটা ভালো মিছিল পর্যন্ত দাঁড় করাতে পারছে না!

কেউ কেউ বলে থাকেন যুদ্ধাপরাধী জামাতের  সাথে মাত্রাতিরিক্ত সখ্যতা বি এন পির আজকের অবস্থার জন্য দায়ী। জামাতের সাথে বি এন পির সখ্যতা একটা কারণ হতে পারে কেননা সাম্প্রতিক কালে এরা এতো বেশি সহিংস আর রক্ত খেঁকো হয়ে উঠেছিলো যা জনমনে রীতিমত আতংকের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গাড়ি পুড়িয়ে মানুষ মারার সংস্কৃতি সাধারণ মানুষ গ্রহণ করবে বি এন পির এটা ভাবা ঠিক হয়নি। তবে কেবল মাত্র জামাত প্রীতির কারণে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিরোধী মহা-সমাবেশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু মিছিল অথবা ২/৪শত মানুষের ঢল পল্টনের দিকে এগুবার চেষ্টা করেনি ভাবা কঠিন। গুঢ় কোন কারণ আছে। কারণ খোঁজতে ব্যর্থ বি এন পি এই ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে যতই মহা আন্দোলনের হুমকি দিক আন্দোলন জমবে না কারণ মূল আন্দোলনকারীরা তাদের উপর আর আস্থা রাখছে না, কেন রাখছে না এই কারণ খোঁজে বের করতে হবে দ্রুত।

৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনের আগের এক বছরকে যদি আলোচনায় টানি পুরোটা বছর বি এন পি ভরসা করেছিলো বিদেশী কূটনৈতিকদের উপর আর জামাতের সহিংসতার উপর অথচ ঐ সময়টা ছিলো জনসম্পৃক্ত আন্দোলন গড়ে তুলার উপযুক্ত সময়। তাঁরা ভেবেছিলো বিদেশীরা এসে তাঁদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে যাবে অথবা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে কেন্দ্র করে জামাতের সৃষ্ট সহিংসতায় দেশে অরাজক পরিস্থিতির উদ্ভোব হবে আর ফাঁক গলে ক্ষমতায় চলে যাবে তাঁরা, কার্যত এর কোনটাই হয়নি। অথচ জনসম্পৃক্ত একটা আন্দোলন দাঁড় করাতে পারলে নির্বাচন হয়ে গেলেও সরকার এতোটা স্বেচ্চাচার হয়ে চলতে পারতো না। বি এন পি এখনো সেই পথে। ভারতে মোদী সরকারের উত্থানে তাদের মিষ্টি বিতরণ আর আনন্দ উদযাপন সাধারণ মানুষকে কিন্তু ভুল বার্তা দেয়। সুষমা স্বরাজ দেখা করবেন খালেদা জিয়ার সাথে এটা মধ্য রাতে প্রেস কনফারেন্স করে বলার মতো কোন বিষয় কি? তারপর সুষমা কিন্তু দেখা করেন না, আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আমাদের পতাকার অসম্মান করে  প্রটৌকলের তুয়াক্কা না করে সুষমা স্বরাজের সাথে দেখা করে আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে নালিশ করেন।

নির্বাচন পরবর্তী সময়ে নয় হাজার মাইল দূর থেকে পুলিশের গুলি খেয়ে মানুষকে মরতে যাওয়ার তারেক রহমানের আহবানে মানুষ সাড়া দেয়নি, কেন দেবে? সামান্য জেল জুলুমের ভয়ে যে নেতা পালিয়ে গিয়ে মানুষকে মরতে যাওয়ার আহবান দেয় সে কতো বড় স্বার্থপর মানুষ আগে না বুঝলেও তাঁর এই আহবানের মধ্য দিয়ে তা স্পষ্ট হয়ে যায়। তারেক রহমান আস্তে আস্তে আরো কিছু সংবাদ সম্মেলন করে নিজেকে এভাবে স্পষ্ট করেন যে তিনি আর যা ই হোন  বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার আসনে অধিষ্টিত হবার ন্যূনতম যোগ্যতাও তাঁর নেই। মূলত কেবল তাঁরই কিছু বালখিল্য আচরণে বি এন পি নামক সংঘটনটির আজকের এই অবস্থা।

বেগম জিয়া একজন মা বা পরিবারের প্রধান না হয়ে যদি বি এন পি নামক বৃহত্তম সংঘটনের চেয়ার পারসন হিসাবে নিজেকে বেশি ভাবতে পারতেন হয়তোবা দলটি জাতীয় রাজনীতিতে আরো ভালো ভূমিকা রাখতে পারতো। তারেক রহমান এখনো শুধু এইটুকু ভাবেন যে বি এন পি ক্ষমতায় না গেলে তিনি মামলা মুক্ত হবেন না, যমুনায় এতো জল গড়াবার পরও তিনি ব্যক্তি স্বার্থ জলাঞ্জলি দেবার কল্পনাও করতে পারেন না। বি এন পি হাই কামান্ডকে ব্যক্তিস্বার্থে অন্ধ নেতাদেরকে চিহ্নিত করে এখোনই বাদ দিয়ে জেল জুলুম সহ সব রকমের আঘাত যন্ত্রণা  সহ্য করার ক্ষমতা সম্পন্ন নেতাদেরকে চয়ন করে কোন পরিবার বা গুষ্টির চিন্তা না করে জাতীয় স্বার্থে রাজনীতি করার মানসে নতুন করে শুরু করতে হবে।

-----------------------------
কয়েছ আহমদ বকুল
কবি, লেখক
যুক্তরাজ্য

 

আরও পড়ুন
পাঠক কলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত