ঢাকা, ০৩ মে, ২০২৪ || ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
Breaking:
অপতথ্য রোধে সরকার, পেশাদার গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজ কাজ করতে পারে : তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী      মহান মে দিবস পালিত      আগামীকাল শুরু হচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন      নির্বাচনের প্রস্তুতি ও প্রচারণা দেখতে আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বিজেপি     
Mukto Alo24 :: মুক্ত আলোর পথে সত্যের সন্ধানে
সর্বশেষ:
  মেহনতি মানুষের ভাগ্যোন্নয়নই আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য: ওবায়দুল কাদের        সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পূর্ণ বিবরণ        উপজেলা নির্বাচনে জনগণই তাদের পছন্দ মতো জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করুক : প্রধানমন্ত্রী     
১৩৯৯

এবারের দশ জানুয়ারির শপথ:অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

লেখকঃ অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

প্রকাশিত: ১০ জানুয়ারি ২০২১  

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)


অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল):
গত বছর শীতের এমনি একটি বিকেল। তারিখটাও একই। ঢাকার তেজগাঁও বিমান বন্দরের টারমার্কে সমবেত হয়েছেন দেশের বাছাই করা বিশিষ্টজনরা। উপস্থিত আছেন প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, দৌহিত্র জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়, মন্ত্রিপরিষদের সম্মানিত সদস্যরাও। উপস্থিত দেশের শীর্ষ সামরিক কর্তারা আর সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে তিন বাহিনীর সুসজ্জিত তিনটি কলাম। পাশেই ব্যারিয়ারের ওপারে কয়েক হাজার উৎসুক জনতা। ধীরে ধীরে টারমার্কের দিকে এগিয়ে আসছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সবুজ একটি পরিবহন বিমান। বিমানে কোন ভি.ভি.আই.পি.র শারীরী উপস্থিতি নেই। তারপরও এত আয়োজন। বিমানটি যতই এগিয়ে আসছে অঝোরে অশ্রু ঝরছে সম্মানিত উপস্থিতিদের। উপস্থিতিদের সেই তালিকায় আছি আমিও এবং আমার পরিস্থিতিও অভিন্ন। গত বছরের শুরু থেকে মুজিববর্ষ শুরুর প্রত্যাশায় বাঙালীর যে অধীর আগ্রহে ক্ষণ গণনা, সেই ক্ষণ গণনার সমাপান্তে, মুজিববর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের একটি ক্ষুদ্র দৃশ্যপট এটি। বাহাত্তরের দশ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন ও নয়াদিল্লীতে স্বল্পস্থায়ী যাত্রাবিরতি শেষে বঙ্গবন্ধু প্রত্যাবর্তন করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশে। সেই বাংলাদেশ যার স্বপ্ন, দর্শন, নাম, পতাকা থেকে শুরু করে জাতীয় সঙ্গীত পর্যন্ত সব কিছুই তার ঠিক করে দেয়া। আর সে কারণেই বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের এই দিনটিকেই বাছাই করে নেয়া হয়েছিল মুজিববর্ষের আনুষ্ঠানিক সূচনার জন্য। ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল সেদিনের সেই আবহ।

তবে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি তো বটেই, বরং বলা ভাল এই অঞ্চল এবং সে সময়কার বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটেও বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে ফেরার এই দিনটির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এর কারণ বোঝাটাও কঠিন না। প্রথমত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি এই অঞ্চলে তো বটেই, এমনকি বিশ্বমানচিত্রেও খুবই বিরল একটি রাজনৈতিক এনটিটি। এটি আক্ষরিক অর্থেই একটি জাতিরাষ্ট্র যার নিরানব্বই শতাংশেরও বেশি মানুষের ভিন্নতা শুধু ধর্মে। অভিন্ন তাদের ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, খাওয়া-দাওয়া, উৎসব সবই। এ অঞ্চলের প্রতিটি রাষ্ট্রেই যেখানে একাধিক জাতিসত্তার বসবাস, সেখানে একটি জাতিরাষ্ট্রের উদ্ভব আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় সংশ্লিষ্ট সবার জন্যই মেনে নেয়াটা কঠিন হওয়ারই কথা। অথচ বঙ্গবন্ধুর বিরল রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় আমরা আমাদের এই বন্ধুর যাত্রায় ভারতকে আমাদের পাশে পেয়েছিলাম এবং এখনও পাচ্ছি। যেমন পেয়েছিলাম এবং পাচ্ছি সেদিনের সোভিয়েত ইউনিয়ন, আজকের রাশিয়াকে।

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের ক্ষেত্রে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামী দেশগুলোর বাধা। সঙ্গত কারণেই সে সময়ের অন্যতম সামরিক ক্ষমতাধর মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্র পাকিস্তানের অমন ভড়াডুবি হজম করাটা তাদের কারও জন্যই উপাদেয় ছিল না। যে কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর স্বীকৃতি পেতে আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছিল পঁচাত্তরের শেষ অবধি। এমনকি পাকিস্তানের ওআইসির শীর্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর যোগদানও তাদের মন ঠিকঠাক মতো গলাতে পারেনি।

চ্যালেঞ্জ ছিল আরও অনেক এবং আরও বড়। সেই সময়টায় পাকিস্তান ছিল এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধানতম মিত্র। আজকে মার্কিন সিনেট হয়ত পাকিস্তানের প্রধান নন-ন্যাটো শরিকের মর্যাদা বাতিলের কথা বিবেচনা করছে, কিন্তু সেদিন তা ছিল অচিন্ত্যনীয়। পাশাপাশি পাকিস্তান ছিল মার্কিনীদের সঙ্গে চীনাদের যোগসূত্রও। হেনরি কিসিঞ্জার পাকিস্তান সফরে এসে হারিয়ে গিয়েছিলেন। আসলে গিয়েছিলেন পিকিংএ, পাকিস্তানের মধ্যস্থতায় চীন-মার্কিন সম্পর্ক স্থাপনে যা প্রসিদ্ধ হয়ে আছে পিং-পং ডিপ্লোমেসি নামে। এত বৈরী বাস্তবতার প্রতিকূলতাকে অগ্রাহ্য করে রক্তের সাগরে সাঁতার কেটে বাংলাদেশের নৌকা তীরে ভিড়েছিল একাত্তরের ষোলো ডিসেম্বর আর তারপর সব শঙ্কা আর জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এর পরের সাড়ে তিন বছরের বাংলাদেশের ইতিহাস শুধুই এগিয়ে চলার। জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ, সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি আর সাড়ে তিন শ’ মার্কিন ডলার মাথাপিছু গড় আয় এসব অসম্ভবকেই সম্ভব করেছিলেন এই অসম্ভব মানুষটি। আর এর খেসারত তাঁকে দিতে হয়েছিল একটি অসম্ভব পরিণতি বরণ করে নিয়ে। পাকিস্তানীরা যা করতে সাহস পায়নি তাই করেছিল এদেশের কিছু কুলাঙ্গার, দেশী-বিদেশী একটি বড় চক্রান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে। বঙ্গবন্ধুর তাজা রক্তে লাল হয়েছিল বত্রিশের সিঁড়ি, স্বাধীন বাংলাদেশে বাঙালীর ছোড়া গুলিতে।

সেখান থেকে বাংলাদেশের জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ার হাত ধরে যে অতি দ্রুতলয়ে পিছনে ছোটা তার রাশটা টেনে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ এখন আবারও সামনে ছুটছে। এই করোনাকালেও যখন বিশ্বের দেশে-দেশে প্রবৃদ্ধির পতন, বাংলাদেশে এখনও তা ঈর্ষণীয়, পাঁচ শতাংশের ঘরে। ব্লুমবার্গের তালিকায় বিশ্বে কোভিডের অন্যতম নিরাপদ স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি আমরা। কোভিডের দ্বিতীয় ধাক্কায় যখন ধরাশায়ী পাশ্চাত্যের একের পর এক উন্নত দেশ, বাংলাদেশে কোভিড তখন নিয়ন্ত্রণের পথে। আর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক আর সামাজিক অর্জনগুলো গত এক যুগে এত বেশি যে, এই প্রবন্ধের এই ক্ষুদ্র পরিসরে সেগুলো না হয় না-ই তুলে আনলাম।

দশ জানুয়ারি তাই বরাবরের মতো এবারও গুরুত্বপূর্ণ। তবে এবারের দশের গুরুত্ব অনেক বেশি। এবারের দশ পড়েছে মুজিববর্ষে। এবারের দশের চারদিন আগে পূর্ণ হলো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আওয়ামী লীগের টানা ক্ষমতার এক যুগ আর এবারের দশের তিন মাস পর বাংলাদেশ পূর্ণ করবে তার গৌরবময় স্বাধীন অস্তিত্বের পঞ্চাশ বছর। এবারের দশের আগে-পরে অস্থিরতাও তাই একটু বেশি। একাত্তরের পরাজিত শক্তি আবারও জিতেছিল পঁচাত্তরে। কিন্তু টানা বারো বছরের অসাম্প্রদায়িক আর একাত্তরমুখী শাসন আর চর্চায় তারা এখন পর্যুদস্ত। এই প্রথম এত বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এই অপশক্তি এবারের দশ জানুয়ারিতে। আর তাই তাদের সব আক্রোশ বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য আর ম্যুরালে তাদের যে আঘাত, তা শুধু বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধেই নয়, এই আঘাত বাংলাদেশের অস্তিত্বেও। এদের চূড়ান্তভাবে পরাজিত করার যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়াটাও তাই এখন খুবই জরুরী। অজস্র উন্নয়ন আর সাফল্যের ডামাডোলে আমরা যেন সেটা বিস্মৃত না হই এই হোক আমাদের এবারের দশ জানুয়ারির শপথ।

লেখকঃ অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

-চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

-সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ



 

মুক্তআলো২৪.কম       

আরও পড়ুন
পাঠক কলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত