ঢাকা, ০৭ আগস্ট, ২০২৫ || ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২
Breaking:
বিএনপি উত্তর বা দক্ষিণপন্থী নয়, মধ্যপন্থী দল : সালাহউদ্দিন আহমদ      নির্বাচনের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হবে: গয়েশ্বর চন্দ্র রায়     
Mukto Alo24 :: মুক্ত আলোর পথে সত্যের সন্ধানে
সর্বশেষ:
  এনসিপি নেতারা কক্সবাজারে যেতেই পারেন, কিন্তু লুকোচুরি কেন? প্রশ্ন রিজভীর        দুদকের মামলায় কলিমউল্লাহ কারাগারে        জুলাই ঘোষণাপত্র পক্ষপাতদুষ্ট, ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে: গণফোরাম     
৬৩

জুলাই ঘোষণাপত্র পক্ষপাতদুষ্ট, ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা লক্ষ্য

মুক্তআলো২৪.কম

প্রকাশিত: ৭ আগস্ট ২০২৫  

জুলাই ঘোষণাপত্র পক্ষপাতদুষ্ট, ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে: গণফোরাম

জুলাই ঘোষণাপত্র পক্ষপাতদুষ্ট, ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে: গণফোরাম


জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে গত মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যে ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন, সেটিকে একতরফা ও পক্ষপাতদুষ্ট আখ্যায়িত করে তাতে ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে বলে দাবি করেছে গণফোরাম।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করে দলটি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান। তিনি জুলাই ঘোষণাপত্রে ১৯৭২–এর সংবিধান প্রণয়নপদ্ধতি এবং সাংগঠনিক কাঠামোগত দুর্বলতা নিয়ে যে প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে, তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বৈষম্যহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের দাবিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে; কিন্তু জুলাই ঘোষণাপত্রে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রব্যবস্থার কোনো রূপরেখা স্থান পায়নি। জুলাই ঘোষণাপত্র একতরফা, পক্ষপাতদুষ্ট এবং ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা লক্ষণীয়। অন্যদিকে ৩৬ জুলাই উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে, যা কাম্য নয়।
 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চে স্বাধীনতা ঘোষণা এবং ১০ এপ্রিলের প্রক্লেমেশন অব ইনডিপেন্ডেন্টের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা এবং স্বাধীন–সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর এর ধারাবাহিকতায় ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হয়। দীর্ঘ ৫৩ বছরে কোনো রাজনৈতিক দল বা সরকার এই সংবিধানের প্রণয়নপদ্ধতি নিয়ে কখনো প্রশ্ন উত্থাপন করেনি।

লিখিত বক্তব্যে জন-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সংবিধান সংযোজন-পরিমার্জন করা যেতে পারে, তবে সংবিধান প্রণয়নপদ্ধতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হলে মুক্তিযুদ্ধকেই বিতর্কিত করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী শক্তিই বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযুদ্ধ এবং বাহাত্তরের সংবিধান নিয়ে প্রশ্ন তুলে থাকে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাহাত্তরের সংবিধানের প্রণয়নপদ্ধতি এবং কাঠামোগত দূর্বলতা নিয়ে জুলাই ঘোষণাপত্রে বিতর্ক সৃষ্টি করার কারণে মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাই আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছে।’

এতে আরও বলা হয়, ‘শুধু বাহাত্তরের সংবিধানকে দায়ী করে (মুক্তিযুদ্ধ–পরবর্তী) সরকারগুলোর রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যর্থতাকে আড়াল করার হীন মানসিকতা পরিলক্ষিত হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় রাজনৈতিক দলের ব্যর্থতাকে কোনোভাবেই সংবিধানের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যুক্তিসংগত হবে না।’
 

সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বিগত সময়ে যাঁরা শাসনক্ষমতায় এসেছেন, তাঁরা সংবিধানকে অনুসরণ না করে অসাংবিধানিকভাবে দেশ পরিচালনার চেষ্টা করেছে। রাষ্ট্রে জবাবদিহি ছিল না, আইনের শাসন ছিল না, বিচারের নামে অনেক জায়গায় অবিচার করা হয়েছে। এতে জনগণ ক্ষুব্ধ ছিল। তাই রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা ছিল, তাদের এই দায়দায়িত্ব নিতে হবে। সংবিধানের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজেদের এড়িয়ে চলা যাবে না।

সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, সরকার বিভিন্ন সময় তার আলোচনা ও কাজে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বৈষম্য তৈরি করেছে। নানাভাবে বিভক্তি তৈরি করেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে জন-আকাঙ্ক্ষা ছিল সংস্কার করে গণতান্ত্রিক চরিত্রে রাষ্ট্র ফিরে আসবে; কিন্তু সর্বশেষ জন-আকাঙ্ক্ষার জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সরকার একধরনের লুকোচুরি করেছে।

মিজানুর রহমান বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে সরবরাহ করা হয়েছে। ঘোষণাপত্র পড়ার দিন দুপুর ১২টায় শুধু সাধারণ সম্পাদকের নামে একটি কার্ড দলীয় অফিসে পাঠানো হয়েছে। এটিও একটি বৈষম্যমূলক আচরণ। তারপরও সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য সেখানে গিয়েছি। সেখানেও অনেক বৈষম্য করা হয়েছে।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘আমাদের দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের যে রাজনৈতিক শক্তি বা যে দল বা আমরা যে চেতনা ধারণ করি, তার সঙ্গে সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান নিয়ে তারা এই ঘোষণাপত্র দিয়েছে।’
 

মিজানুর রহমান বলেন, জন-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন, পরিমার্জন করা যেতে পারে। কিন্তু বাহাত্তরের সংবিধানের প্রণয়ন পদ্ধতি নিয়ে যদি প্রশ্ন তোলা হয়, তাহলে মুক্তিযুদ্ধকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। স্বৈরাচার এরশাদের পতন কিংবা শেখ হাসিনার পতনের সঙ্গে যদি মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়, সংবিধানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে জুলাই ঘোষণার মধ্যে বিতর্কিত বিষয় টেনে আনা হয়, তাহলে এটি পক্ষপাতদুষ্ট। এর পেছনে অনেক ধরনের অশুভ শক্তি কাজ করে।

যারা মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশ নির্মাণে বাধাগ্রস্ত করেছিল, তারাই এখন তৎপর হয়েছে উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, তারাই সংবিধানকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সরকার সেই ফাঁদে পা দিয়েছে। সরকার সেটি করতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য জুলাই অভ্যুত্থান হয়নি। এত মানুষ রক্ত দেয়নি। রাষ্ট্র নির্মাণের মীমাংসিত বিষয়গুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করার দায়িত্ব জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে কেউ দেয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের সভাপতি পরিষদ সদস্য এ কে এম জগলুল হায়দার, কোষাধ্যক্ষ শাহ নুরুজ্জামান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লতিফুল বারী হামিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ, তথ্য ও গণমাধ্যম সম্পাদক টি এইচ এম জাহাঙ্গীর, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা হাসান, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক মজিবুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রমুখ।








মুক্তআলো২৪.কম

আরও পড়ুন
রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত