ঢাকা, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ || ১১ বৈশাখ ১৪৩১
Breaking:
রাঙ্গামাটির সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে ছয়জন নিহত, আহত-৭      কক্সবাজারে ভোটার তালিকায় থাকা রোহিঙ্গাদের তালিকা চেয়ে হাইকোর্ট আদেশ     
Mukto Alo24 :: মুক্ত আলোর পথে সত্যের সন্ধানে
সর্বশেষ:
  বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে মরিশাসের প্রতি আহ্বান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর        মন্ত্রী-এমপি’র স্বজনরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে ব্যবস্থা: ওবায়দুল কাদের        থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা     
২১৯৯

কবি,লেখক ও সাংবাদিকঃআব্দুস সাত্তার এর-

কিছু কথা না বললেই নয়...(০২)

ওয়াশিংটন ডিসি থেকেঃ আব্দুস সাত্তার

প্রকাশিত: ২ জুন ২০১৪   আপডেট: ১৩ জুন ২০১৪

লেখক ও সাংবাদিক আব্দুস সাত্তার  ও জনাব আকরামুল কাদের রাষ্ট্রদূত ওয়াশিংটন ডিসি।

লেখক ও সাংবাদিক আব্দুস সাত্তার ও জনাব আকরামুল কাদের রাষ্ট্রদূত ওয়াশিংটন ডিসি।

প্রায় দেড় যুগ ধরে মেট্রো ওয়াশিংটনে বসবাস করছি। সে সুবাদেই কমিউনিটি ও মূলধারার সাথে শেকড়ের মতো জড়িয়ে আছি। প্রবাসের এতোগুলো বছরে কত কিছুই দেখলাম, কত কিছু কান পেতে শুনলাম। এইটাই তো হয় বা হবার কথা মানব জীবনে? তাই না?

আমি যে কথাগুলো লিখতে যাচ্ছি তা হলো একেবারে একজন সাদা মনের মানুষের কথা। একজন মুক্তিযুদ্ধার কথা। উল্লেখ্য জনাব আকরামুল কাদের ও তাঁর দুই ভাই মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন ১৯৭১ সালে। তিনি বেঁচে গেলেও তার দুই ভাই শহীদ হন সেই যুদ্ধে।  তাঁর সারাটা জীবন যুদ্ধ করে বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তাও প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায়। তিনি জনাব আকরামুল কাদের।

আমি আমেরিকাতে অনেক রাষ্ট্রদূত দেখেছি। একেক জনের চলা -ফেরা একেক রকম। প্রবাসে একজন রাষ্ট্রদূত মানে বাংলাদেশের একজন প্রেসিডেন্টের সমান। তাই হয়তো অনেক রাষ্ট্রদূত সেই বাংলাদেশের কথা ভুলতে পারেন না! যেমন বাংলাদেশে দেখা যায় গ্রামের একজন চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলতে গেলেও তার সেক্রেটারীর অনুমতি নিতে হয়? মন্ত্রী, এমপি তো বহু দূরের কথা!আমারা প্রবাস জীবনে ভালমন্দ নিয়েই চলছি। তারপরও যখন নতুন ভাবে কিছু দেখতে পাই তখন আর নিজেকে সামাল দিতে পারি না। আমার হিদয়ের ভেতরে কেউ যেন তাগিদ দিতে থাকে কিছু লেখ? সেই অনুভূতি থেকে আজকের লেখা।

জনাব আকরামুল কাদের বিগত পাঁচ বছর আমেরিকান বাংলাদেশ দূতাবাসে কাজ করলেন। আমি একটা ভালো দিক দেখেছি সেটা হলো তিনি বর্তমান সরকারের নিয়োগ দেওয়া রাষ্ট্রদূত হয়েও দূতাবাসকে কোন দলীয়করন করেননি। তিনি একমাত্র রাষ্ট্রদূত যা করতে পেরেছেন। তারপর আরেকটি কথা লিখতেই হয়। আমরা পূর্বে দুতাবাস বলতে জানতাম পাসপোর্ট বানানো বা ভিসা লাগানো কাজকর্ম আর বড় বড় লোকদের ওখানে আনাগোনা! এই কথাটি ও তিনি ভুল প্রমান করেছেন। তিনি আসার পর থেকেই দূতাবাস কে মনে হয়েছে বাংলাদেশের রমনার বটমূল! এই কথা লিখার কারন তিনি বাংলাদেশের সবগুলো অনুষ্ঠান দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়ামে করতে সমর্থন হয়েছেন কমিউনিটির সবাইকে নিয়ে। যেখানে ছিলনা কোন ভেদা-ভেদ। আর সেই সুবাদেই জনাব আকরামুল কাদের কে কাদের সাহেব না বলে "কাদের ভাই" বলতে পেরেছেন অনেকেই! 

জনাব আকরামুল কাদেরের সাথে প্রায় সবকটি প্রোগ্রামেই দেখা হয়। গত ৪৩ তম স্বাধীনতা দিবসে তাঁর আমন্ত্রণে দূতাবাসে যাই। আমার সাথে দেখা হবার পরে তিনি বললেন

-কি সাহিত্যিক সাহেব লেখা লেখি কেমন চলছে?

-জি ভালো।

- সাত্তার সাহেব আমার বই কবে পাব?

-আমি কি বই নিয়ে দূতাবাসে আসব?

- নিরুপমের সাথে কথা বলে একদিন আস। কিছু না বলা কথা বলি চা পান করতে করতে।

- ঠিক আছে। আমি যোগাযোগ করে একদিন চলে আসব।

-ওকে। ভালো থেক।

একজন রাষ্ট্রপ্রধান আমার মতো সামান্য লেখকের বই চাচ্ছে। আমি সত্যি হতভাগ হয়েছি। আমি খুব অস্তির কখন নিরুপমের সাথে কথা বলে সময় নিব। কিছুক্ষন পরেই নিরুপমের সাথে দেখা হলে তাকে বিস্তারিত বলি। সে আমাকে ইমেইল করতে বলে। মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। বাসায় এসে ইমেইল করলাম। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য উনার সাথে দেখা করার কোন সময় দিতে পারেননি নিরুপম! এমনকি আমার ইমেইলের কোন রিপ্লাই দেন নি। এভাবেই কেটে গেল কয়েক মাস। গত সপ্তাহে উনার সাথে একটা প্রোগ্রামে আবার দেখা সালাম দেওয়ার সাথে সাথে বললেন কি সাত্তার সাহেব আসলেন না বই নিয়ে। আমি বললাম নিরুপম সময় দেয় নি। আপনি প্রিয়ন্তির সাথে যোগাযোগ করেন। কথা মতো প্রিয়ন্তিকে ফোন করি। তিনি অতি বিনয়ের সাথে আমার সাথে কথা বলে সময় করে দিলেন। আমি মহাখুশী।

আমাকে সময় দেওয়া হয়েছে বিকাল পাঁচটায়। আমি ঠিক সময়েই হাজির হয়ে গেলাম দূতাবাসে। কিন্তু আমার বিপদ যেন বারবার হাতছানি দিতেছিল। ওখানে পৌছার পর জানতে পারলাম জনাব আকরামুল কাদের হঠাত অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। প্রিয়ন্তে আমার কাছে এসে বললেন সরি স্যার মনে হয় আজ আসতে পারবেন না! এদিকে দূতাবাসে উনার জন্য বিদায়ের অনুষ্ঠান করতেছে বিকাল ৬টায়। কি যে হবে সবাই দুশ্চিন্তায় আছে। সময় যখন ৫:৩০ তখন তিনি দূতাবাসে এসে হাজির। তিনি তাঁর রুমে না গিয়ে গেস্ট রুমে বসে পড়লেন। আমার মতো আরও আকজন উনার সাথে কথা বলার জন্য এসেছেন। উনার সাথে কয়েক মিনিট কথা বলার পর আমার কাছে এসে কোলাকুলি করে বললেন দেন আপনার বইসব নেই। তারপর বসতে হবে ।আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারব না। আমি বইসব উনার হাতে দেওয়ার পর তিনি এক হাতে বইসব ধরলেন আর আমাকে বললেন অন্য হাত উনার হাতে ধরার জন্য। আমি কিছুটা সংকুচিত বোধ করছি আর ভাবছি একজন রাষ্ট্রপ্রধান কি পারে এমন ভালোবাসায় বাঁধতে! সত্যি তিনি একজন সাদা মনের মানুষ। না হয় তিনি যা করলেন তা কেউ করবে বা করেছে? সত্যি আমাদের দেশের রাষ্ট্রপ্রধান,মন্ত্রী, ও সরকারী কর্মচারীরা যদি জনাব আকরামুল কাদেরের মতো হতো! তাইলে সোনার বাংলা সোনা দিয়ে বেঁধে রাখা যেত!

তারপর তিনি আমাকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়ামে গেলেন। তিনি একটি চেয়ারে বসে আমাকে আরেকটিতে বসতে বললেন। আমি বসলে তিনি কিছু না বলা কথা শুরু করে দিলেন। যান, আজ কি হয়েছে আমি বাসায় যাব রওয়ানা হয়েছি কিন্তু চলে গেলাম হাসপাতালে। কি অবস্থা এই টেস্ট সেই টেস্ট করতে করতে কতগুলো ইনজেকশান ও ঔষধ দিয়ে আমাকে শুইয়ে রেখেছে। এক ঘণ্টা পর আমি বললাম আমি চলে যাব। আমার যেতে হবে দূতাবাসে প্রোগ্রাম হবে। ডাক্তার কোন মতেই রাজি হচ্ছে না। এক পর্যায়ে বড় ডাক্তার এসে আমাকে চেক করে বলে যেতে পারেন এক শর্তে প্রোগ্রাম শেষ হলে আবার চলে আসবেন হাসপাতালে। আমি বললাম ওকে। তারপর চলে আসলাম। কি করব বল। আমি এতো লোককে দাওয়াত দিয়েছি। আর আমি যদি না থাকি। তাইলে কি হবে। আরও অনেক না বলা কথা তিনি বলে গেলেন অকপটে। যা অন্য আরেকদিন লিখব।

পরিশেষে একটি কথা না বললেই নয় আজ। গত ২৬ মার্চ ২০১৩ ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস উদযাপন করলো বাংলাদেশের ৪২ তম স্বাধীনতা দিবস। আমি আর আমার সহ ধর্মিণী (লিজা) দূতাবাসের আমন্ত্রণে অতিথি হয়ে অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করি। দূতাবাসে আসা অন্যান্য অতিথিদের সাথে কথা বলছি এমন সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং প্রতিমন্ত্রী জনাব আকরামুল কাদের আমার সামনে এসে বললেন, সাত্তার সাহেব এসেছেন? ভালো আছেন? লিজাকে( আমার স্ত্রী) সালাম দিলেন। আমি বললাম জি ভালো আছি। ঠিক সেই সময়ে তিনি আমার সবুজ শার্টের উপর পড়া লাল টাইটা হাতে নেড়ে ঠিক করে দিলেন আর বললেন এইটাই আমাদের স্বাধীনতা দিবসের পোশাক।আমি সত্যি যেমন লজ্জা পাচ্ছিলাম তেমনি আনন্দে আমার চোখের কোনায় কিছু পানি যেন ভীড় করছিল। কবে যে বাবার হাতের ছোঁয়া পেয়েছিলাম মনে নেই। আজ আবার আমায় বাবার কথা মনে করিয়ে দিল। আমার বাবা আমাকে এমনই ভাবেই আদর করতেন।

অনেকে তো অনেক বড় বড় পুরস্কার পেয়েছেন। আমিও অনেক পেয়েছি। তাতে কি আসে যায়? কিছুই না? সেদিন আমি যা পেয়েছি এবং আজ যা পেলাম তা সব চেয়ে সেরা পুরস্কার। তাই নয় কি?

জনাব আকরামুল কাদের আপনাকে লাল সবুজের সালাম। আপনি ভালো ও সুস্থ থাকুন আপনার পরিবারের সাথে। আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আমিন।

আব্দুস সাত্তার
ওয়াশিংটন ডিসি
লেখক ও সাংবাদিক।

আরও পড়ুন
প্রবাস ভাবনা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত