এনবিআর ভাঙার কারণ জানাল সরকার
মুক্তআলো২৪.কম

এনবিআর ভাঙার কারণ জানাল সরকার
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে ফেলা হচ্ছে কেন তা নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে সরকার। আজ মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলমও একই পোস্ট দিয়েছেন।
এতে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি বড় ধরনের কাঠামোগত সংস্কার ঘোষণা করেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে দিয়ে এর পরিবর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি পৃথক সংস্থা গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে—রেভিনিউ পলিসি ডিভিশন (রাজস্ব নীতিমালা বিভাগ) এবং রেভিনিউ ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন (রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ)।
এই সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য হলো—কর নীতিমালা প্রণয়ন এবং কর প্রশাসনের কাজ আলাদা করা, যাতে দক্ষতা বাড়ে, স্বার্থের সংঘাত কমে এবং দেশের করের আওতা বিস্তৃত হয়।
প্রায় ৫০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এনবিআর ধারাবাহিকভাবে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের ট্যাক্স-টু-জিডিপি অনুপাত বর্তমানে মাত্র ৭.৪ শতাংশ, যা এশিয়ার মধ্যে অন্যতম সর্বনিম্ন।
তুলনামূলকভাবে, বৈশ্বিক গড় ১৬.৬ শতাংশ, আর মালয়েশিয়ায় ১১.৬ শতাংশ। দেশের জনগণের উন্নয়ন প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে বাংলাদেশের ট্যাক্স-টু-জিডিপি অনুপাত কমপক্ষে ১০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।
এনবিআরের পুনর্গঠন এই লক্ষ্য অর্জনে অত্যন্ত জরুরি। ক্রমবর্ধমান একমত রয়েছে যে, একটি প্রতিষ্ঠানকে একসাথে কর নীতিনির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া স্বার্থের দ্বন্দ্ব এবং অদক্ষতা সৃষ্টি করে।
বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আসছেন যে কর নীতিগুলো অনেক সময় রাজস্ব আদায়কে অগ্রাধিকার দিয়েছে, যা ন্যায্যতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এনবিআরের দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলো :
স্বার্থের সংঘাত : একই ছাতার নিচে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন থাকায় কর নীতিগুলো প্রায়ই দুর্বল হয়েছে এবং অনিয়ম বেড়েছে। কর আদায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কোনো জবাবদিহির মধ্যে পড়েন না এবং প্রায়ই কর ফাঁকি দেওয়া করদাতাদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত সুবিধার বিনিময়ে সমঝোতা করে থাকেন।
অনেক সময় দেখা যায়, কর আদায়কারীরা কর ফাঁকিদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী না হয়ে তাদের সহযোগিতা করেন। তাদের পারফরম্যান্স পরিমাপের কোনো পদ্ধতি নেই এবং তাদের পদোন্নতির সঙ্গে কোনো পরিমাপক যোগ্যতা বা সাফল্য জড়িত নয়।
অদক্ষ রাজস্ব সংগ্রহ : নীতি প্রণয়ন ও প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর সমান গুরুত্ব না দেওয়ায় করজালের পরিধি সংকুচিত হয়েছে এবং সম্ভাবনার তুলনায় রাজস্ব সংগ্রহ অনেক পিছিয়ে পড়েছে।
দুর্বল প্রশাসন : এনবিআর কার্যকর আইন প্রয়োগে ব্যর্থ হয়েছে, বিনিয়োগ সহায়তায় দুর্বলতা দেখিয়েছে এবং শাসন ব্যবস্থার নানা সমস্যায় ভুগছে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়েছে এবং আইন-শৃঙ্খলা দুর্বল করেছে।
আমলাতান্ত্রিক জটিলতা : বর্তমানে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রধানই এনবিআরের প্রধান হওয়ায় নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নে দ্বন্দ্ব ও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে, যার ফলে কর ব্যবস্থাপনা কার্যকরভাবে পরিচালিত হচ্ছে না।
মানসিক চাপ ও অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ : এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় অভিজ্ঞ কর ও শুল্ক কর্মকর্তারা অনেকে নিজেকে কোণঠাসা বা অবহেলিত মনে করছেন।
পুনর্গঠন কিভাবে উপকারে আসবে সে ব্যাখ্যাও দিয়েছে সরকার—
দায়িত্বের স্পষ্ট বিভাজন : রেভিনিউ পলিসি ডিভিশন কর আইন প্রণয়ন, হার নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক কর চুক্তি ব্যবস্থাপনার কাজ করবে। রেভিনিউ ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন দায়িত্ব পাবে কর আদায়, নিরীক্ষা এবং কর পালনের ওপর। এর ফলে যারা করের নীতিমালা ঠিক করবেন, তারা কর আদায়ে যুক্ত থাকবেন না, যার মাধ্যমে স্বার্থের সংঘাত ও দুর্নীতির সুযোগ কমে যাবে।
দক্ষতা ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধি : প্রতিটি বিভাগ তার মূল কাজের ওপর গুরুত্ব দিতে পারবে, যা দক্ষতা বাড়াবে, স্বার্থের দ্বন্দ্ব কমাবে এবং প্রতিষ্ঠানের সচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে।
করজাল বিস্তার ও প্রত্যক্ষ কর বৃদ্ধি : এই সংস্কারের মাধ্যমে করের আওতা বাড়বে, পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরতা কমবে এবং যোগ্য পেশাজীবীদের সঠিক জায়গায় নিয়োগ দিয়ে প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহে গতি আসবে।
উন্নয়নমুখী নীতিমালা প্রণয়ন : একটি স্বতন্ত্র নীতি ইউনিট তথ্য-ভিত্তিক, ভবিষ্যতমুখী কর কৌশল তৈরি করতে পারবে, যা শুধুমাত্র তাৎক্ষণিক রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সীমাবদ্ধ থাকবে না।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি : স্বচ্ছ ও পূর্বানুমানযোগ্য নীতিমালা এবং পেশাদার কর প্রশাসন বিনিয়োগকে আকর্ষণ করবে এবং বেসরকারি খাতের অভিযোগ কমাবে।
সব মিলিয়ে, এই পুনর্গঠন শুধুমাত্র একটি প্রশাসনিক রদবদল নয়—এটি একটি ন্যায্য, দক্ষ এবং আধুনিক কর ব্যবস্থা গড়ে তোলার পথে এক অত্যাবশ্যকীয় পদক্ষেপ। শক্তিশালী নীতিনির্ধারণ এবং স্বচ্ছ কর প্রশাসন দেশের জনগণের চাহিদা পূরণ এবং প্রত্যাশা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মুক্তআলো২৪.কম
- সন্তুষ্ট মার্কিন জোট পোশাক কারখানা পরিদর্শন করে
- এনবিআর বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের থেকে কর আদায়ে নামছে
- টেলিনরের নতুন পরিকল্পনা ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধিতে
- বাণিজ্যমন্ত্রীর আহ্বান অশুল্ক বাধা দূর করার জন্য ভারতের প্রতি
- প্রয়োজন যোগ্য চার্টার্ড সেক্রেটারি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে:
- এক বছরে বেড়েছে ৬২%
সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের তিন হাজার কোটি টাকা - এফবিসিসিআই
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সফর প্রসঙ্গে - সবজি রপ্তানিতে বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি ৫৫ শতাংশ
- কালশী রোডে ওয়ালটন শো-রুম উদ্বোধন হলো মিরপুরের
- ম্যানুফেকচারিং শিল্প ইউনিট স্থাপন করুক টাটা মটরস:বাণিজ্যমন্ত্রী
- ইউএসটিআরকে চিঠি পোশাক শিল্পের হাল দেখতে আসতে
- একনেকে ২ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ প্রকল্পের অনুমোদন
- ৬৮০ কোটি ডলার গত অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি
- পুরস্কৃত করলো ইগলু ৮১ বিক্রেতাকে
- যোগাযোগ মন্ত্রণালয় অবশেষে পদ্মা সেতু প্রকল্পে মূল ব্রিজ নির্মাণের জন্য