ঢাকা, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ || ১০ বৈশাখ ১৪৩১
Breaking:
ঢাকায় ভিসা সেন্টার চালু করেছে চীনা দূতাবাস     
Mukto Alo24 :: মুক্ত আলোর পথে সত্যের সন্ধানে
সর্বশেষ:
  জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ জলবায়ু উন্নয়ন অংশীদারিত্ব গঠন: প্রধানমন্ত্রী        ন্যাপ এক্সপো-২০২৪ উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর        যুদ্ধ ব্যয়ের অর্থ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় ব্যবহার হলে বিশ্ব রক্ষা পেত: প্রধানমন্ত্রী        কাতারের আমীরকে লাল গালিচা অভ্যর্থনা দেয়া হয় ঢাকা বিমানবন্দরে     
৯৯২

স্বাধীনতা তুমি

ফাল্গুনী মুখোপাধ্যয়

প্রকাশিত: ৩ মে ২০১৪   আপডেট: ৩ জুন ২০১৪

ফাল্গুনী মুখোপাধ্যয়

ফাল্গুনী মুখোপাধ্যয়

জন্মেছিলাম অখন্ড ভারতে, ঔপনিবেশিক শাসনমুক্তির পাঁচ বছর আগে । জ্ঞান হতেই জেনেছিলাম বাঙালি জাতিসত্তার খন্ডিত অংশের মানুষ আমি, আর এক খন্ড ওপারে । শচিনদেব বর্মণ এপারে, তার’ পদ্মার ঢেউ ওপারে। জীবনানন্দ এপারে, তাঁর গাছগাছালির বরিশাল ওপারে । ইলা মিত্র এপারে, তাঁর কয়েদ খাটা রাজশাহী জেল ওপারে । ভাষা শহিদ বরকতের জন্মভিটা এপারে আর তাঁর শহিদ ভুমি ওপারে । সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া আর সীমান্ত রক্ষীর বন্দুক যেন নিদারুণ পরিহাস মনে হত । তারপর দুই দশকের সংগ্রামে অনেক রক্তের দাম চুকিয়ে আমারই ভাষা পেলো তার নিজের রাষ্ট্রভূমি – ১৯৭১এর ২৬শে মার্চ ।

সত্তরের দশকের বাঙ্গালির রক্তে যেন মাতাল করার উপাদান ছিল, ছিল  যুগান্তরের হাতছানিতে উত্তাল হওয়ার আহ্বান ।  এপারে তখন নতুনতর সমাজ বন্দোবস্তের স্বপ্ন বুকে নিয়ে ‘বসন্তের বজ্র নির্ঘোষ’ – হাজারো তরুণের আত্মদান, আর ওপারে লাখো মানুষের বজ্র নিনাদ ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ।

১৯৭০এর ১২ই নভেম্বর পূর্ব উপকূলে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সামরিক শাসকদের ইচ্ছাকৃত ব্যর্থতা পূর্বের মুক্তির আকাংখ্যায় আর একটি স্ফুলিঙ্গ হয়ে গেল । কয়েক লক্ষ মানুষের মৃত্যুর এক সপ্তাহ পরে ইয়াহিয়া খান স্বীকার করেছিল দুর্যোগ ও মৃত্যুর ভয়াবহতা তার প্রশাসন অনুমান করতে পারেনি । ১৯শে নভেম্বর ১১টি রাজনৈতিক দল এক বিবৃতিতে তীব্র ধিক্কার জানাল ইয়াহিয়া খানের অপদার্থতার, ২৪শে নভেম্বর মৌলনা ভাসানি ৫০হাজার মানুষের সমাবেশে ইয়াহিয়া খানের পদত্যাগ দাবি করলেন । পূর্ব দিগন্ত মুক্তির সূর্যোদয় আকাংখ্যায় উত্তাল । মাতৃভাষাকে ভালোবাসার আবেগ কেমন করে এক সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম দিতে পারে সারা বিশ্ব তা দেখলো । মহম্মদ আলি জিন্নার যে দ্বি-জাতি তত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম, সেই দ্বি-জাতি তত্বের ভূতই যেন তাড়া করেছিল পাকিস্তানের শাসকদের, রাষ্ট্র সৃষ্টির প্রথম দিন থেকেই । একাত্তরের ছাব্বিশে মার্চ যার চরম পরিণতি । ৭ই মার্চ ১৯৭১ গণ জোয়ারে উত্তাল ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবের সেই ঐতিহাসিক ভাষণ –“ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল । এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”।

একটু পিছন ফিরে তাকাই । ১৯৪৮এ মহম্মদ আলি জিন্না ঢাকার মাটিতে দাঁড়িয়েই, বাঙ্গালির ভাষা পরিচয় ও সাংস্কৃতিক অভিমানকে কিছুমাত্র গুরুত্ব না দিয়ে ঘোষণা করে দিলেন ‘উর্দু এবং শুধু মাত্র উর্দুই’ হবে পাকিস্তানের একমাত্র,সরকারী ভাষা । বলা বাহুল্য ঐদিনই মহম্মদ আলি জিন্না তার সাধের পাকিস্তানের অঙ্গচ্ছেদ ও একটি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখার বীজ পুঁতে দিলেন । ২৫শে মার্চ ১৯৭১ এ পাকিস্তান জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল আর ঐ দিন থেকেই শুরু হল পূর্ব পরিকল্পিত ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ , নেমে এলো সামরিক বাহিনীর তীব্র আক্রমণ, কয়েক লক্ষ মানুষের হত্যা । অন্য দিকে মুক্তি বাহিনীর উত্তাল সংগ্রাম । ঐ দিনই শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রে স্বাক্ষর করলেন । বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হলেন ঐ দিন রাত্রি ১-৩০টায় । পরদিন মুক্তিবাহিনীর দখল নেওয়া একটি বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমান শেখ মুজিবের পক্ষে ঘোষণা করলেন নতুন রাষ্ট্রের জন্ম ।  সেই রক্তক্ষয়ী দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস বাঙালি চিরদিন স্মরণ করবে, ১৯৫২য় যার সূচনা । শত শহিদের রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা । তারা মৃত্যুতে দেখেছিল ‘অমরত্বের রাজধানী’ ।

ওপারের স্বাধীনতার বয়স মাত্রই তেতাল্লিশ । আজকের নবীন প্রজন্মের বাঙ্গালির দায় সেই অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তোলার আহ্বানে সাড়া দেওয়া আর এক নতুনতর সমাজ বন্দোবস্ত নির্মাণের শপথ নেওয়া । প্রজন্ম চত্তরের তারুণ্যের বজ্রনিনাদিত প্রত্যয় আমরা দেখেছি । সেই প্রত্যয় ব্যর্থ হবে না কিছুতেই, আমরা বিশ্বাস করি । নবীন প্রজন্ম এই উচ্চারণে মুখরিত হোক --

‘স্বাধীনতা তুমি বাগানের ঘর, কোকিলের গান,

বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা

স্বাধীনতা তুমি যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা’

আমার কাছে ছাব্বিশে মার্চ শুধু এক ভৌগলিক ভুখন্ডের রাজনৈতিক স্বাধীনতার দিন নয়, ছাব্বিশে মার্চ বিশ্বের ছাব্বিস কোটি বাঙ্গালির স্বাধীনতা, তার মাতৃভাষার রাষ্ট্রীয় ভুখন্ডের নির্মাণের দিন । “আমাদের এক রবীন্দ্রনাথ এক নজরুল ।

আমরা ভাষায় এক ভালোবাসায় এক মানবতায় এক...”

Calcutta, India

আরও পড়ুন
পাঠক কলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত