ঢাকা, ২০ এপ্রিল, ২০২৪ || ৭ বৈশাখ ১৪৩১
Breaking:
ঢাকায় ভিসা সেন্টার চালু করেছে চীনা দূতাবাস     
Mukto Alo24 :: মুক্ত আলোর পথে সত্যের সন্ধানে
সর্বশেষ:
  স্বচ্ছতার সাথে সরকারি অনুদানের চলচ্চিত্র বাছাই হবে : তথ্য প্রতিমন্ত্রী        বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী     
১৩৭৭

জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধু- ফিরে দেখা:অধ্যাপক ডা.মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল

লেখকঃ অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

প্রকাশিত: ২ অক্টোবর ২০২০  

অধ্যাপক  ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল

 

অধ্যাপক ডা.মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল:
১৯৭৪ এর ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেন। নানা কারণে এই দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ছিল জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর প্রথম এবং শেষ ভাষণ। কারণ এর পরের বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বসার আগেই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে শাহাদাত বরণ করেন জাতির জনক।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দেয়ার নজির এটাই প্রথম। সেবারই প্রথম জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেয়ার সুযোগ পান বাংলাদেশের কোন সরকার প্রধান। এর অল্প কদিন আগে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সংস্থাটির সদস্য পদভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আবেদনটি অনুমোদন করে। চুয়াত্তরের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ১৩৬-তম সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয় বাংলাদেশ।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনটিতেও একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের কারণেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলায় তার ভাষণটি দিয়েছেন ডিজিটালি। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বরাবরই বাংলায় ভাষণ দিয়ে আসছেন। কিন্তু জাতিসঘে সাধারণ পরিষদে ডিজিটালি বাংলায় ভাষণ দেয়ার নজির এবারই প্রথম স্থাপিত হল। আজকের বাস্তবতায় ঘটনাটি হয়ত সামান্যই। আমরাতো এই করোনাকালে হরহামেশাই যুক্ত হচ্ছি এই মিটিং আর সেই মিটিং-এ ডিজিটালি। কিন্তু তারপরও আমার কাছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভাষণটির গুরুত্ব অনেক বেশি।

কিসিঞ্জারের সেদিনের যে তলাহীন ঝুড়ি, বঙ্গবন্ধুর মাধ্যমে যাকে বিশ্ব সভা চিনেছিল ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে, সেই বাংলাদেশই আজ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’। ২০৪১-এ একটা উন্নত বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নে, এমনকি এই করোনাকালেও যখন মহাকর্মযজ্ঞে ব্যস্ত গোটা জাতি, তখন এই ছোট্ট ঘটনাটিই বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের নতুন সক্ষমতার পরিচায়ক বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্য পদ লাভের পথটা কিন্তু মোটেও মসৃণ ছিল না। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের জাতিসংঘে যোগদানের প্রথম আবেদনটি নিরাপত্তা পরিষদের ১১টি সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থন পেলেও, ধোপে টেকেনি। এমকি আমাদের স্বাধীনতার আদ্যোপান্ত বিরোধিতাকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভোটটি পাওয়া সত্ত্বেও না। কারণটা ছিল চীনা ভেটো। ১৯৭১ সালে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে ভেটো দেয়ার ক্ষমতা পায় গণচীন। আর তারপর পাকিস্তানের স্বার্থরক্ষার তাগিদে জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে তারা প্রথমবারের মত তাদের ভেটো ক্ষমতাটি প্রয়োগ করে। এটিও একটি ইতিহাস বৈকি!

বাংলাদেশের ভাগ্যে জাতিসংঘের শিকেটি ছিঁড়ে এরও বহুদিন পর ১৯৭৪-এর ১৭ সেপ্টেম্বর। এদিন নিরাপত্তা পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোটে বাংলাদেশের জাতিসংঘের সদস্যপদভুক্তি অনুমোদিত হয়। তবে এই ভোটাভুটিতেও ভোট দানে বিরত ছিল চীন। বাংলাদেশের পক্ষে তারা তাদের ভোটটি প্রদানের উদারতা সেদিনও দেখাতে পারেনি। এর আগে অবশ্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ৯৬টি সদস্যরাষ্ট্র বাংলাদেশের জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের বিষয়টির প্রতি সমর্থন দেয়।

এতো কাঠখড় পুড়িয়ে জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ এবং তার ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪-এর ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর যে ভাষণ, সেটি বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু সেদিন তার ভাষণে বাংলাদেশের কথাই শুধু বলেননি, বলেছিলেন বিশ্ব মানবতার কথা। তিনি তার ভাষণটি শেষ করেছিলেন ‘অসম্ভবকে সম্ভব করার আর অজেয়কে জয় করার মানুষের শক্তির উপর’ আস্থা রেখে। জাতিসংঘের ‘ডেলিগেট বুলেটিনে’ এ ভাষণটির পর বঙ্গবন্ধুকে আখ্যায়িত করা হয়েছিল কিংবদন্তীর এক নেতা হিসেবে। আর জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কুট ওয়ার্ল্ডহেইম এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটির জন্য তার আনন্দ ও সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছিলেন।

আজকে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে যে বাংলাদেশ শীর্ষ অংশীদার, নিউইয়র্কের ঐ বড় দালানের চৌকাঠগুলো পেরোতে তাকে কম কাঠ-খড় পোড়াতে হয়নি। অথচ এই বাংলাদেশ জাতিসংঘকেই গর্বিত করেছে বারবার। সেদিন বঙ্গবন্ধু করেছিলেন তার সেই কালজয়ী ভাষণের মাধ্যমে আর এই দিন তার সুযোগ্য কন্যা জাতিসংঘকে আবারো গর্বিত করলেন আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত বৈশ্বিক দুর্যোগ প্রশমনে তার পাঁচ দফা প্রস্তাবনা দিয়ে।

আত্মবিস্মৃত জাতি আমরা। প্রায়ই আমরা আমাদের বিশেষ-বিশেষ দিনগুলোকে স্মরণ করতে ভুলে যাই। ভুলে যাই আমাদের বড় বড় অর্জনগুলোকেও। হয়তো নিভৃতে হারিয়ে যেতো ২৫ সেপ্টেম্বর আরো একবার, বরাবরই যেমনটি যায়। তবে এবারের ২৫ সেপ্টেম্বর ছিল কিছুটা ব্যতিক্রম। আলোচনায়-মিডিয়ায় উঠে এসেছে জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর প্রথম ভাষণ। এটি একটি শুভলক্ষণ বৈকি। কারণ ইতিহাস বিস্মৃত বাঙালি যতো তাদের শিকড়ের খোঁজ করবে, যতো তাদের শিকড়ের কাছাকাছি যেতে চাইবে- তাতেই বাঙালির মঙ্গল, তাতেই উজ্জ্বল বাঙালির আগামী!

লেখক : অধ্যাপক ডা.মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ।

 


মুক্তআলো২৪.কম

আরও পড়ুন
পাঠক কলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত