একটি সাম্প্রতিক ট্রল এবং মাধ্যমিকের বাংলা রচনার স্মৃতি
লেখকঃ অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)
অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল
অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল):
আমাদের যখন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের লেখাপড়া, এমসিকিউয়ের চল তখনও হয়নি। বড় বড় সব উত্তরে পরীক্ষার খাতার পৃষ্ঠা ভরার একটা প্রতিযোগিতা থাকত আমাদের মধ্যে। লিখতাম বিশাল বিশাল সব রচনা। ভাবটা এমন ছিল যেন বেশি বেশি লিখে পাতা ভরাতে পারলেই লেটার মার্কের স্বপ্নের হরিণটা ধরা দেবে। পরীক্ষার আগে তাই টেস্ট পেপার সলভ করা আর বড় বড় সব রচনা মুখস্থ করা ছিল পরীক্ষার প্রস্তুতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
সে সময় একটা রচনা প্রায়ই কমন পড়ত ‘বিজ্ঞানের সুফল আর কুফল’। মার্কনির রেডিও আর ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট টেলিভিশন, এসব নিয়ে লেখালেখি চলত বিস্তর। আর বিজ্ঞানের এহেন উৎকর্ষের ডামাডোলে আবহমান গ্রাম বাংলার সহজ-সরল জীবনযাত্রা যে লাটে উঠতে বসেছে সে কথা লিখতেও অবশ্য ভুলতাম না।
আজকের এই ডিজিটাল যুগে নতুন নতুন শব্দের সাথে আমাদের নিত্যপরিচয়। ইদানীং শিখেছি ‘ট্রল’। বেচারা মন্ত্রী মহোদয়কে ট্রলের শিকার হতে দেখে হঠাৎ করেই ছোটবেলায় মুখস্থ করা রচনাটির কথা মনে পড়ল। আমার ধারণা ভদ্রলোক চালাচ্ছেন বেশ ভালোই। অবশ্য চিকিৎসক হয়ে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে মন্তব্য করতে যাওয়ার চেয়ে আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর নেয়াও যে অনেক বেশি সহজ তাও আমি ভালোই জানি।
তারপরও আমার সাধারণ বুদ্ধিতে আমি যতটুকু বুঝি আর সেই কবে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ার সময়ে জাতীয় সাপ্তাহিকীতে পররাষ্ট্রবিষয়ক কলাম লেখালেখির যৎকিঞ্চিৎ অভিজ্ঞতা থেকে আমার যে লব্ধজ্ঞান, তাতে আমি অন্তত এটুকু বলতে পারি, রোহিঙ্গা ইস্যুতে তার যে বলিষ্ঠ ভূমিকা তেমনটি আমি এদেশের কোনো পররাষ্টমন্ত্রীকে সচরাচর নিতে দেখিনি।
টিভির পর্দায় আমার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতদের পরামর্শ দিতে দেখেছি রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার নিয়ে খুব বেশি উৎকণ্ঠিত হলে, সে বিষয়ে ঢাকায় বক্তৃতা-বিবৃতি না দিয়ে বরং নেপিদোতে গিয়ে দিতে। আর ক’দিন আগে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যখন সাগরে ভাসমান রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার জন্য অযাচিত পিড়াপিড়ি করছিলেন, তখন এই মন্ত্রী মহোদয়কেই শুনেছি এসব রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য ব্রিটিশ রাজকীয় জাহাজ পাঠানোর পাল্টা প্রস্তাব দিতে।
সাম্প্রতিক সময়েও কোভিড-১৯ মোকাবিলায় তার নেয়া পদক্ষেপগুলো প্রশংসিত হয়েছে। আজকে কাশ্মির সীমান্তে একে অপরের মুখোমুখি চীন আর ভারত, এই দুটো দেশকেই দেখেছি আমাদের সফল পররাষ্ট্রনীতির কল্যাণে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রতি সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দিতে। চীনের ‘ভালোবাসার নাও যখন চলেছে পাহাড় ডিঙ্গিয়ে’, তখন ভারতীয়দের প্রত্যাশা ছিল ‘আঁধার ঘুচুক, পরশ থাকুক হৃদয় ভরা’।
আবার অন্যদিকে বাংলাদেশের নৌবাহিনীর জাহাজ-ভরা ভালোবাসা পৌঁছে গেছে প্রতিবেশী মালদ্বীপে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোভিডে অসহায় হয়ে পড়া প্রবাসীদের জন্য পাঠানো হয়েছে অর্থ সাহায্য আর এমনকি টেলিমেডিসিনের সেবা সম্প্রসারিত করা হয়েছে সৌদিপ্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্যও।
একসময় আমেরিকা প্রবাসী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে দেখেছি এই কোভিডের সময়ই মার্কিন আর ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতদের কুটনৈতিক শিষ্টাচারের লক্ষণ-রেখাগুলো চিনিয়ে দিতে। আবার সেদিন যখন দেখলাম তার সফল কূটনৈতিক উদ্যোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হচ্ছে বাংলাদেশের বেক্সিমকো উৎপাদিত ৬৫ লাখ পিপিই। এসব দেখে আর শুনে বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে গর্বে বুকটা প্রসারিত হয়েছে দশ ইঞ্চি। সাথে অবশ্য যোগ হয়েছে আরও দুটি ইঞ্চি, কারণ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের মতো আমার পূর্বপুরুষদের আদিনিবাসও সিলেট শহরে আর কাকতালীয়ভাবে তিনি আমার প্রয়াত পিতার অনুজপ্রতিম ঘনিষ্ট বন্ধু।
সাম্প্রতিক সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল করা হচ্ছে তার একটি মন্তব্যের বিকৃত ব্যাখ্যার সূত্র ধরে। বলা হচ্ছে, তিনি বলেছেন প্রবাসীরা কোভিডের কারণে দেশে ফিরে আসলে তারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাবেন। মন্ত্রী মহোদয়ের বক্তব্যটি আমি শুনেছি। তার বক্তব্যের সারবস্তু ছিল এই যে কোভিডের কারণে আর দশটি দেশের অর্থনীতির মতো আমাদের অর্থনীতিতেও কিছুটা হলেও ধাক্কা আসবে। এ সময় যদি দশ-পনের লাখ প্রবাসী দেশে ফিরে আসেন, তাহলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য সুখকর হবে না, কারণ আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার একটি বড় অংশ আসে প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক রেমিট্যান্স থেকে। কাজেই প্রবাসীরা এ সময় দেশে ফিরে আসলে তাতে দেশের অর্থনীতির ওপর চাপটা বাড়বে এবং পাশাপাশি এতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি হতে পারে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের পক্ষে সাফাই গাওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি খুব ভালোই জানি চালে-ডালে মিশে সুস্বাদু খিচুড়ি তৈরি হতে পারে, মিশতে পারে তেলের সাথে জলও, কিন্তু ‘ঐ বটিকাটি’ যারা একবার গলাধঃকরণ করেছেন, বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধুর অনুসারী কিংবা একটিবারের জন্যও বঙ্গবন্ধুর ছায়া মাড়িয়েছেন এমন কারও কোনো কিছুই তাদের ভালো লাগার কথা না। আর তাদের ভালো লাগানোর চেষ্টা করার চেয়ে সাগর সেচে মুক্তা কুড়ানো যে অনেক সোজা সেটাও আমার জানা। শুধু একজন ভালো মানুষকে শুধু-শুধু হেনস্তা করা হচ্ছে দেখে মনোজগতে যে অস্বস্তি, সেই জায়গাটি থেকে এই লেখাটির অবতারণা।
লেখকঃ অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)
-চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
-সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ।
মুক্তআলো২৪.কম
- এম আর ফারজানা`র কবিতা-
`জ্যোৎস্নারাতে মৃত্যুর অপেক্ষা` - স্বাস্থ্যসেবা এবং উপেক্ষিত ফার্মাসিস্টদের অবদান:সাদেকুর রহমান
- `বৃটেনের কার্ডিফে ওয়েলস আওয়ামীলীগের উদ্যোগে শোক দিবস পালিত`
- কয়েছ আহমদ বকুল এর কলাম-
`শামীম আইভী বিতন্ডা আমাদের মিডিয়া ও অসহায় আইন` - এ.কে. দুলাল এর কবিতা-
`বায়বীয় প্রেম` - কলাম-
`কেবল ব্যক্তিস্বার্থই ধ্বংস করছে একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দলকে` - আমি সব ভুলে যাই, তাও ভুলি না ছাত্রলীগের বোল!
- এলিজা আজাদ এর কবিতা-
`আমার জীবন কাহিনী কি করে শোনাবো তোমায়` - কয়েছ আহমদ বকুল এর কলাম-
সম্প্রচার নীতিমালঃ আদৌ কি প্রয়োজন ছিলো! - কবি,লেখক ও সাংবাদিকঃআব্দুস সাত্তার এর-
কিছু কথা না বললেই নয়...(১০) - একজন অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়া আর একটি প্রশ্ন
- পল্লব মাহমুদ এর কলাম-
`শুনেই মনে হতে পারে এ আবার নতুন কী ?` - ফেরদৌস হাসান খান এর কবিতা-
`শব্দের বৃষ্টি` - দোলন মাহমুদ এর কবিতা-
`অগূঢ়ে আক্ষেপ` - কয়েছ আহমদ বকুল এর কলাম-
`অরণ্যে রোদন অথবা সমকালীন বিলাপ`