ঢাকা, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১
Breaking:
রাঙ্গামাটির সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে ছয়জন নিহত, আহত-৭      কক্সবাজারে ভোটার তালিকায় থাকা রোহিঙ্গাদের তালিকা চেয়ে হাইকোর্ট আদেশ     
Mukto Alo24 :: মুক্ত আলোর পথে সত্যের সন্ধানে
সর্বশেষ:
  বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে মরিশাসের প্রতি আহ্বান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর        মন্ত্রী-এমপি’র স্বজনরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে ব্যবস্থা: ওবায়দুল কাদের        থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা     
১৩২৯

সাখাওয়াত পারভেজ এর ছোট গল্প-

`একজন মিলির গল্প`

সাখাওয়াত পারভেজ

প্রকাশিত: ২ জুন ২০১৪   আপডেট: ২৮ জুন ২০১৪

"আগামীকাল মিলির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ... ব্যাপারটা ঠিক এমন না যে মিলির বাবা-মা জোর করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে ... বিয়েতে মিলির মত আছে ... খুব ভালো রকমের মত আছে ... প্রশ্ন জাগে, তবুও কেন বলা হলো "মিলির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে" ?? ... অবশ্যই বলা উচিত ছিল "আগামীকাল মিলির বিয়ে" !! মিলির চেহারার দিকে তাকালেও "বিয়ে হয়ে যাচ্ছে" এর লক্ষণ দেখা যায় না ... সে হাসছে ... মোটামুটি আনন্দিত সে ... তার হাত ভরা মেহেদি ... খুব যত্ন করে চুল আচড়াচ্ছে সে !! খুব ধুমধাম করে মিলির বিয়ে হচ্ছিল ... বিশাল খাওয়া- দাওয়া ... হাজার লোকের সমাগম ... মিলিকে সুন্দর লাগছিল ... বিয়ের সাজে সব মেয়েকেই সুন্দর লাগে !! বিয়ে হয়ে গেলো ... বছর কেটে গেলো ... মিলির ঘরে একটা ছেলে সন্তান আসলো ... মিলি এখন ভীষণ সুখী একটা মেয়ে !! ... ... ... পুরো ১৩ বছর পর মিলির ডায়রিটা পাওয়া যায় ... ডায়রিতে যে কয়টা লেখা ছিল, সবগুলোই বিয়ের আগের ... যতদূর জানা যায়, মিলির এই বিয়েটা অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ ছিল ... কিন্তু ডায়রির লেখাগুলো পড়ে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল, মিলির একটা রিলেশন ছিল !! ছেলেটাকে মিলি প্রচন্ড ভালোবাসতো ... প্রত্যেকটা লেখার মাঝে অনেক বেশি আবেগের ছাপ ছিল ... ডায়রির বিভিন্ন পাতার ফাঁকে শুকিয়ে যাওয়া গোলাপের পাপড়ি ছিল ... খুব সুখী ছিল তারা !! মিলি খুব ভালো ছবি আঁকতো ... ডায়রির বেশিরভাগ পাতায় দুইটা হাতের ছবি আঁকা ছিল ... খুব শক্ত করে ধরে রাখা দুইটা হাত ... একটা ছবির নিচে লিখা ছিলঃ "সে সবসময় আমার হাত ধরে রাখে ... খুব শক্ত করে ধরে রাখে ... আমি বললাম, "এমনভাবে হাত ধরে রাখো যেন হাত ছাড়লেই আমি চলে যাবো ??" সে কপাল কুঁচকে বললো, "হু, ফুড়ুৎ করে উড়ে চলে যাবা !!" আমি হেসে ফেলি ... দিনের বাকি সময়টা আমার হাত খালি খালি লাগে ... প্রচন্ড শূন্য লাগে !!" মিলির ডায়রির বাকি লেখাগুলা গোপন থাকুক ... শেষ পৃষ্ঠায় কাঁপা কাঁপা হাতে কয়েকটা লাইন লিখা ছিলঃ "আজকে সে প্রথম এবং শেষবারের মত আমার হাত ছেড়ে দিলো ... আমি কষ্ট পাচ্ছি ... ভীষণ কষ্ট ... এই অবস্থায় একটা মেয়ে আত্মহত্যা করে, ঘুমের ওষুধ খায় কিংবা হাত কাটে ... আমি এগুলার কিছু করবো না ... আমি স্বাভাবিক থাকবো ... ভীষণ স্বাভাবিক ... কেউ কিচ্ছু জানবে না ... কেউ কিচ্ছু বুঝবে না ... শুধু আমি ভেতরে ভেতরে পুড়বো !! খুব শীঘ্রই আমার বিয়ে হবে ... তার সাথে না ... অন্য কারো সাথে ... আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে ... আমাকে অন্য কোন একজন এর হাত ধরে বেঁচে থাকতে হবে ... অন্য কোন একজন পাশের বালিশটায় জায়গা করে নিবে ... আমার একটা সন্তান হবে, সে অন্য কোন একজনকে বাবা বলে ডাকবে ... আমি হাসিমুখে থাকবো !! শুধু আমিই জানবো, কেউ একজন আমার হাতটা শক্ত করে ধরেছিল ... কেউ একজন আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজেছিল ... কেউ একজন আমার কপালের টিপ ঠিক করে দিতো ... কেউ একজন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতো ... কেউ একজন খুব সকালে ফোন করে আমার ঘুম ভাঙ্গাতো ... কেউ একজন ফিশফিশ করে রাতে কথা বলতো !! প্রত্যেকের জীবনে এই "কেউ একজন" থাকে ... কারো কারো ভাগ্য হয় ঐ "কেউ একজন" এর সাথে সারা জীবন থাকার ... আর কারো কারো ভাগ্য হয় "অন্য কোন একজন" এর সাথে সারা জীবন থাকার !! তবুও জীবন থেমে থাকে না ... আমি, তুমি, "কেউ একজন", "অন্য কোন একজন" সবাই চলতে থাকে ... একদম নিজের মত !! অনেকে অবাক হয়ে প্রশ্ন করবে, "কীভাবে তার জায়গাটা তুমি আরেকজনকে দিলা ??" পৃথিবীতে কেউ কাউকে কারো জায়গা দেয় না ... কেউ কাউকে REPLACE করতে পারে না ... ভাগ্যের দোষে হয়তোবা অন্য কারো হাত ধরতে হয়, কিন্তু হাতের ভেতরটা আর আগের মত উষ্ণ লাগে না ... ভাগ্যের দোষে অন্য কারো সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়, কিন্তু নিজের ভেতরটা আর আগের মত সিক্ত হয় না !! ... ... ... মিলির ডায়রির শেষ লাইনটা পড়া যাচ্ছিল না ... লেখার উপর পানি পড়েছিল সম্ভবত ... কলমের কালি ছড়িয়ে গেছে ... খুব সম্ভবত লেখাটা ছিলঃ "পৃথিবীর যে কেউ আমার চোখের জলের কারণ হতে পারে ... কিন্তু ঐ "টুপ করে গড়িয়ে পড়া অশ্রুবিন্দু" টা কিন্তু একজনই, একজনের জন্যই ... ওটা কখনোই কেউ হতে পারে না, পারবে না ... "টুপ করে গড়িয়ে পড়া অশ্রুটার" কথা কেউ জানে না ... কেউ না !!

===========================সমাপ্ত=============================

 

 

আরও পড়ুন
শিল্প-সাহিত্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত