শিশু জন্মের পর বাবা-মায়ের অর্থ ব্যবস্থাপনায় কিছু সাধারণ ভুল

অনলাইন ডেস্ক

মুক্তআলো২৪.কম

প্রকাশিত : ০২:২৬ এএম, ২ জুলাই ২০১৪ বুধবার | আপডেট: ১২:২৪ এএম, ১২ জুলাই ২০১৪ শনিবার

২০১২ সাল থেকে জন্ম নেওয়া প্রতিটি নবজাতককে পরের ১৭ বছর অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদাগুলোর যোগান দিতে মধ্য আয়ের বাবা-মাকে ২ লাখ ১ হাজার ৮০ মার্কিন ডলার খরচ করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতির ধারাবাহিকতায় অভিক্ষিপ্ত মুদ্রাস্ফীতি আমলে নিলে এই খরচ ৩ লাখ ১ হাজার ৯৭০ ডলারে গিয়ে ঠেকবে। এমনই এক হিসেব দিয়েছে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার। এটা গড় মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য গড় হিসেব।
এ বিষয়ে আমেরিকায় বিস্তার গবেষণা এবং জরিপ পরিচালিত হলেও মৌলিক সমস্যাটি দেশ-কাল ভেদে সবার জন্য প্রযোজ্য। অধিকাংশ নতুন বাবা-মায়েরা শিশুদের বড় করতে গিয়ে হিসেব মেনে চলতে পারেন না। বিশেষ করে শিশুর জন্মের প্রথম কয়েক বছর তো তারা কিছুই বোঝেন না। কারণ এ সময় পৃথিবীর যেকোনো জিনিস এনে দিতে প্রস্তুত তারা। শিশু লালন-পালনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজেদের বাস্তব আর্থিক অবস্থাকে অস্বীকার করতে চান। তাই এখানে নতুন বাবা-মায়েরা অর্থ বিষয়ে যে সাধারণ কিছু ভুল করেন তা তুলে ধরা হলো।
*. `আমিসন্তানেরজন্যসবচেয়েভালোটাচাই`
সব বাবা-মা তার সন্তানের জন্য সবচেয়ে ভালোটা খোঁজেন। সবচেয়ে ভালো মানে সবচেয়ে দামি ও অসাধারণ নয়। মার্কিন সরকারের এক হিসেবে দেখানো হয়, প্রথম সন্তানের পেছনে মধ্যবিত্ত পরিবার প্রথম দুই বছরে ১০ হাজার ডলার খরচ করেন। আর দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে তা হয় ৮ হাজার ডলার। সন্তানের জন্য সবচেয়ে ভালো বলতে বোঝায় তার মৌলিক চাহিদাগুলো সমানভাবে পূরণ করা।
*. `এখনআমারসঞ্চয়েরপ্রয়োজননেই`
ঘরে সন্তান এসেছে এবং সে দেখতে দেখতে বড় হয়ে উঠবে। আর আপনি হয়ে যাবেন বুড়ো। তাই সন্তানের পেছনে অর্থ ঢালতে গিয়ে নিজের সঞ্চয় বাদ দিলে চলবে না। কারণ কলেজে ওঠার পর মধ্যবিত্তদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, সন্তানের লেখাপড়া চালাতে তারা দেনার ভারে নুয়ে পড়েছেন। তাই নিজের সঞ্চয়ের সঙ্গে কলেজের খরচ সামলাতেও সঞ্চয়ের প্রয়োজন রয়েছে।
ইমপ্লয়ি বেনেফিট রিসার্চ ইনস্টিটিউট দেখিয়েছে, ১৮ শতাংশ কর্মজীবী অবসরের পর নিজের সঞ্চয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী থাকলেও ২৪ শতাংশের কোনো আত্মবিশ্বাস নেই। এখন এটা আপনার সিদ্ধান্ত যে, অবসর নেওয়ার পর সন্তানের ওপর নির্ভর করে চলার সিদ্ধান্ত কী নেবেন, নাকি নেবেন না?
*. `আমারকলেজেরজন্যসঞ্চয়েরপ্রয়োজননেই`
আমেরিকার ইতিহাসে ২০১৪ সালে সন্তানদের কলেজ পাস করাতে বাবা-মায়েরা সবচেয়ে বেশি দেনা করেছে। কাজেই ভাবুন, যারা এখন নতুন বাবা-মা তাদের কী অবস্থা দাঁড়াতে পারে? মূলত শিশুটি বড় হয়ে কলেজে যাওয়া পর্যন্ত অনকে সময়ের ব্যাপার। এ পর্যন্ত চিন্তা করতে পারেন না বাবা-মায়েরা। তাই সঞ্চয়ের জন্য বহু সময় রয়েছে বলে মনে হয়। তাই নিজের বয়স্কালের জন্য সঞ্চয়কে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়ার পরই সন্তানের কলেজের জন্য সঞ্চয়কে মাথায় আনতে হবে।
এক হিসেবে দেখা গেছে, যাদের অন্তত একটি ব্যাটেরর ডিগ্রি রয়েছে তারা ২২ বছর থেকে ৬৪ বছর বয়সের মধ্যে ডিগ্রিহীনদের চেয়ে ১.২ মিলিয়ন ডলার বেশি আয় করেন। কাজেই সন্তানকে কলেজ পাস করানোর জন্য অর্থ সঞ্চয় অতি জরুরি বিষয়।
*. `আমাদেরএকজনকেবাচ্চারসঙ্গেথাকতেহবে`
কর্মজীবী বাবা-মায়েদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ সমস্যাটি হয়। বাচ্চার দেখাশোনার জন্য যেকোনো একজনের বাড়িতে থাকার প্রয়োজন বোধ করেন তারা।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপে দেখা যায়, ২৯ শতাংশ আধুনিক মায়েরা বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৯৯ সালের ২৩ শতাংশ থেকে এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ফলে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে নারীদের অংশগ্রহণ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে কয়েকটি প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হবে সততার সঙ্গে। পরিবারের যেকোনো একজনের উপার্জন দিয়ে কী আসলেই চলতে পারবেন? না পারলে বাচ্চা দেখাশোনার জন্য পরিবারের অন্য কোনো সদস্য কী সাহায্য করতে পারেন? যদি একান্তই না সম্ভব হয়, তবে একটু বড় হওয়ার পর মা হিসেবে আপনি কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবেন কিনা তা বুঝতে হবে।
*. `আমাদেরএখনএকটিবড়বাসাদরকার`
সন্তান হওয়ামাত্র বড় বাসার প্রয়োজন অনুভূত হয়। কিন্তু তার কী আদৌ দরকার আছে কিনা বাস্তবতার নিরিখে বুঝতে হবে। ভবিষ্যতে বাসার পেছনে বাড়তি খরচের সঙ্গে সন্তানের ক্রমশ বেড়ে চলা খরচের যোগান দিতে পাবেন তো? ভবিষ্যতের সঞ্চয়ের হিসেব অন্তত বড় বাসা নেওয়ার পেছনে ঢেলে ফেললে হবে না। সূত্র : বিজনেস ইনসাইডার