সমস্ত অর্জন ও সাফল্যের নেপথ্যে:অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব

মুক্তআলো২৪.কম

মুক্ত আলো

প্রকাশিত : ০৮:০১ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০২২ বৃহস্পতিবার

​​​​​​​অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

​​​​​​​অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)



অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল):আজ থেকে দু’বছর আগে যখন হঠাৎই এসে ঘরের দুয়ারে হাজির হলো কোভিড আর তারপর লকডাউনে-নকডাউন  একের পর এক দেশের পর এই আমরাও, সেদিন আজকের এই দিনটিতে যে এত তাড়াতাড়ি পৌঁছতে পারব তা ছিল যে কারোর জন্যই স্বপ্নেরও অতীত। প্যান্ডেমিক থেকে মুক্তি পেতে চাই ভ্যাকসিন। ধারণা করা হচ্ছিল সেই ভ্যাকসিন তৈরি করতে লাগবে বছরের পর বছর।
 

তাই বছরের পর বছর ধরেই কোভিডের সঙ্গে বসবাসের প্রস্তুতিতে যখন বিশে^র প্রতিটি মানুষ ব্যস্ত, তখন এক বিশে^র অভিন্ন বিপন্ন মানবতার জন্য ভ্যাকসিন প্রাপ্তির নিশ্চয়তার বিষয়টি সামনে আনায় যিনি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন, তিনি বাংলাদেশের  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর কোভিড ভ্যাকসিন যখন একদিন বাস্তবতা, তখন নিজস্ব কোনো ভ্যাকসিন না থাকা সত্ত্বেও পৃথিবীর অনেক বাঘা-বাঘা দেশকে ডিঙ্গিয়ে বিশ্বের অনেক দেশের আগে বাংলাদেশের মানুষকে কোভিশিল্ডের প্রতিরক্ষার আওতায় এনেছিলেন এই মহীয়ষী নারীই।

তাঁর একক কৃতিত্বে একদিকে যেমন কোভিড ম্যানেজমেন্টে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম আর দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম, তেমনি অন্যদিকে পৃথিবীর হাতেগোনা যে কয়েকটি দেশের প্রবৃদ্ধি কোভিডকালেও ঋণাত্বকের ঘরে নামেনি, সেই পদক তালিকায়ও একেবারে ওপরের দিকেই বাংলাদেশের নাম। পৃথিবীতে প্রায় শতাধিক দেশের জনসংখ্যা কোটি ছাপিয়ে। এই লম্বা তালিকার মাত্র তিনটি দেশ- বাংলাদেশ, ভারত আর চীন একদিনে কোটি ডোজ সফল কোভিড ভ্যাকসিনেশনের  নজির স্থাপন করতে পেরেছে। বাংলাদেশের এই অর্জন এক কথায় ছাপিয়ে গেছে কিংবদন্তিকেও।

কদিন আগের ছোট্ট একটি খবর। খবরটা দৃষ্টি এড়িয়েছে বেশিরভাগ মানুষের। পাকিস্তানের খাইবার-পাখতুনখোয়ায় শিশুদের পোলিও টিকা খাওয়ানোর অপরাধে মৌলবাদীরা গুলি করে হত্যা করেছে দুই ভ্যাকসিন কর্মীকে। কদিন পরের খবর। এই খবরটি অবশ্য দৃষ্টি এড়ায়নি কারোরই। সাফ ফুটবলজয়ী বাংলাদেশের মহিলা ফুটবল দলকে খোলা বাসে সংবর্ধিত করেছে সরকার।

সরকারী ব্যবস্থাপনায় ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মতিঝিলে বাফুফে ভবন অবধি তাদের সেই খোলা বাসযাত্রায় রাস্তার দু’ধারে ছিল লাখো মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত জোয়ার। পাকিস্তান যখন তার পোলিও ভ্যাকসিন কর্মীকে গুলি করে মারছে, তখন পাকিস্তানের পেটের ভেতর থেকে যে বাংলাদেশের জন্ম, সেই দেশে হাজারো ধর্মান্ধের শত চোখরাঙানিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাংলাদেশের গরিষ্ঠ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততায় আমাদের মেয়েদের সাফ সাফল্যও কিংবদন্তিতুল্য।

॥ তিন ॥

একাত্তর সালে কম বেশি হাজার পাঁচেক চিকিৎসকের দেশ ছিল বাংলাদেশ। সেদিনের সাত কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশ আজ সতেরো কোটি মানুষের বাসভূমি। সেদিনের সাপেক্ষে বিবেচনা করলে দেশে চিকিৎসকের সংখ্যা কোনো হিসেবেই হাজার পনেরোর বেশি হওয়ার কথা নয়। এর বিপরীতে বাস্তবতাটা এই যে, দেশটিতে এখন গ্র্যাজুয়েট চিকিৎসকের সংখ্যা লাখের ঘর ছাড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, তাদের সবাই না হলেও অনেকেই পাশাপাশি একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণেও অবদান রেখে চলেছে। পাঁচ হাজারের বাংলাদেশকে লাখো চিকিৎসকের বাংলাদেশে পরিণত করার কিংবদন্তিতুল্য সাফল্যটি এককভাবে শুধুই শেখ হাসিনার।

॥ চার ॥

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে একটি পত্রিকায় লিখেছিলাম, একাত্তরের ষোলোই ডিসেম্বর যা ঘটেছে, ঘটত যদি তার উল্টোটা, তবে আর যাই হোক একমাত্র মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপকের পরিচয়ে স্বপ্নীলের জাতীয় দৈনিকে কলাম লেখার সুযোগ এই জনমে ঘটত না। আমরা আজ এই দেশে যে যাই কিছু হই না কেন, আর তাতে সবটাই নিজের কষ্টার্জিত কৃতিত্ব মনে করে যতই বগল বাজাই না কেন, বাস্তবতা এই যে- সেদিন বঙ্গবন্ধু আর এদিন তাঁর কন্যা  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা না থাকলে কোনো কিছুই হতে পারত না।

এর অন্যথা হলে এই স্বাস্থ্য খাতেই যদি পাকিস্তান অধিকৃত বাংলাদেশে আমাকে ক্যারিয়ার গড়তে হতো, তবে তা দূরের কোনো অবহেলিত জনপদে কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চতুর্থ শ্রেণীর কোনো পদের অন্যথা যে হতো না, সেটা তো সুনিশ্চিত। আর আমার মতো কোটি বাঙালির জীবন-জীবিকার অমোঘ নিয়তির এই যে কিংবদন্তিতুল্য বিবর্তন, এর পুরোটাই  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান।

॥ পাঁচ ॥

পদ্মার দুকূল জুড়ে দেয়া পদ্মা সেতু এখন বাংলাদেশের আইকনিক স্ট্রাকচার। ঠিক যেমনটি আইফেল টাওয়ার ফ্রান্সের, স্ট্যাচু অব লিবার্টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিংবা বিগ বেন যুক্তরাজ্যের। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এখন মহাশূন্যে জানান দেয় আমাদের এগিয়ে চলার গল্পগাথা। আর রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ক্রমশ দৃশ্যমান পারমাণবিক চুল্লিগুলো বারে বারে স্মরণ করিয়ে দেয় ক্রমেই বাড়তে থাকা আমাদের সক্ষমতা।

আমরা এখন ঢাকার দিগন্তে মেট্রোরেলে উড়ে বেড়াতে আর কর্ণফুলীর গহীন তলদেশে গাড়ি হাঁকিয়ে খরস্রোতা কর্ণফুলী পাড়ি দেয়ার স্বপ্নে বিভোর। বর্তমানের এই উপচেপড়া সাফল্যগাথা হার মানায় কিংবদন্তিকেও। আর যার হাত ধরে আমাদের এই কিংবদন্তি বিজয়, তিনি  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া আর অন্য কেউ নন।

॥ ছয় ॥

উইকিপিডিয়া বলছে, কিংবদন্তি হলো ‘ইতিহাস ও কল্পনার সংমিশ্রণে লৌকিক কথাসাহিত্যের চারিত্র-বিশিষ্ট লোক কথা’।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিহাসের অনিবার্য অংশ। তিনি ইতিহাস নির্মাণ করেই চলেছেন। তিনি কথাসাহিত্যের চরিত্র নন। পুরোটাই বাস্তব আর সেই বাস্তবতা এমনই এক চরম বাস্তবতা, যার কাছে ম্লান কথাসাহিত্যের অমর চরিত্রও। এখানে কল্পনার কোনো স্থান নেই। শেখ   হাসিনা এমন এক কিংবদন্তি, যিনি কিংবদন্তিকেও ছাপিয়ে যান।

লেখক : ডিভিশন প্রধান
ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও
সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ










মুক্তআলো২৪.কম