অধ্যাপক ডা.স্বপ্নীল ও পীযুষ দা`র জন্ম উৎসবের এক সন্ধ্যা

মোঃসরোয়ার জাহান

মুক্ত আলো

প্রকাশিত : ০৯:৩৯ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২২ মঙ্গলবার


বিশ্বের কেউ কেউ যুদ্ধ অবস্থায় রত, ওরা আমার মতই রক্তমাংসের মানুষ, ওরা খাদ্যের চেয়ে জীবনের নিরাপত্তা খুঁজে বেড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। কেউ ডোন উড়িয়ে ধ্বংস করছে যুদ্ধের ট্যাংক, কামান, কেউবা নিক্ষেপ করছে ক্ষেপণাস্ত্র, বেপরোয়া ছুটে চলেছে যুদ্ধবিমান। এর কোন এক ফাঁকে আমারও মনে হল আমাকে ছুটতে হবে, এই জীবনে যে কয়জন মানুষকে শ্রদ্ধা করি সম্মান করি ভালোবাসি সেই মানুষগুলোর সঙ্গে একসঙ্গে পথ চলার অঙ্গীকার নিয়ে সেদিন মঙ্গল বার ছিল সম্প্রতি বাংলাদেশের অফিসে অধ্যাপক ডা.মামুন আল মাহতাব স্বপ্নিল স্যারের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল ।যদি ওখানে যাওয়াটা হয়েছিল অধ্যাপক ডাক্তার উত্তম কুমার বড়ুয়া দাদার আমন্ত্রণে।

অধ্যাপক ড.স্বপ্নিলের দিকে তাকাতেই, দেখি সঙ্গে পীযূষ দা সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহবায়ক, পীযুষ দাকে আদাব এবং সালাম বিনিময়ের করলাম।অধ্যাপক স্বপ্নীল স্যার আমাকে বিনয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে পাশের রুমে ঢুকে গেলেন। তারপর প্রত্যাশিতভাবে উত্তমদার সঙ্গে দেখা হলো। বেশ ভালো লাগলো তখন আজ কিছু গুণী মানুষের সঙ্গে দেখা হলো অনেকদিন পর। এদের সংস্পর্শে কাটানো সময়টাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি এ জীবনের।

সম্প্রীতি বাংলাদেশের অফিসের সম্প্রীতি আড্ডায় শেষকালটাতে আমিও জুড়ে বসলাম‌। ফেরদৌসী আপা ওখান থেকে আমাকে আমন্ত্রণ জানালেন একটি কার্ড দেয়ার মাধ্যমে, বাইশে সেপ্টেম্বর আপনি আসবেন।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর হয়ে যখন ছুটে চলেছি নভোথিয়েটার হয়ে বিজয় সরণিতে ফ্লাইওভার দিয়ে ছুটে চলেছি আমি।দুজন নক্ষত্রের জন্ম উৎসবে নিজেকে সামিল করতে।ছয়টা পাঁচ মিনিটে ,আমি গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম। নভো কনভেনশন সেন্টারের ১৫ তালায়।

 ইনভাইটেশন কার্ডটি আমি সঙ্গে রেখেছিলাম।।এরকম সেলিব্রেশনে অনেক সময় তা প্রয়োজনে পড়েছিল জীবনে আমার। ঢুকতেই চোখে পড়লো রিসিপশনে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল এর শুভেচ্ছা পত্র।
আমি সিকিউরিটিকে কে বললাম,কনভেনশন হলটি লিফটের কত ?তিনি বললেন, সঙ্গে আমাদের স্টাফ যাচ্ছে স্যার। আপনাকে নিয়ে যাবেন। নভো কনভেনশন সেন্টারে এইবারই প্রথম আমার আসা।

লিফটে ওঠার পর যেটা হল সেটা আমার জীবনের একটা বিশাল বড় প্রাপ্তি। মুখে মাক্স প্যান্টের পেছনে নিমন্ত্রণ পত্রটি, আমি লিফটের মনিটরের দিকে চোখ রাখতেই দেখি একজন শুভ্র নির্মল মায়াবী মহল একে, মুখে করোনা কালীন মাক্স। সঙ্গে একজন ড্রাইভার তাকে পথ দেখিয়ে এখানে এনেছেন সে কথা বলছেন একজনের সঙ্গে। আমার হাতটা উঠিয়ে ঘার বেঁকিয়ে আমি তাকে শ্রদ্ধেয় একটা সালাম জানালাম আসসালামুয়ালাইকুম আন্টি।

স্বভাবসুলভ মাতৃ প্রসন্ন কণ্ঠস্বরে আমাকে সালামের উত্তর নিলেন। তিনি জয়া নাসরিন চৌধুরী খালাম্মাকে নিয়ে ভিতরে ঢুকতেই পল্লী বাউল সমাজ উন্নয়ন সংস্থার বাউল দলের সব বাউলরা এগিয়ে এলো। খালাম্মাকে পেয়ে ওরা যেন হাতে চাঁদ পেয়ে গেছে এরকম মনে হল । আমি তখন নিজের মনোন পর্যবেক্ষণ সব ইন্দ্রিয় দিয়ে খুব সতর্কভাবেই। সবার সঙ্গে আমিও তার পায়ে হাত স্পর্শ করে সালাম করলাম। তখন মনে হচ্ছিল, শেষের কবিতার অমিতের মতোই আমারও মনে হল মাসিমা কিংবা খালাম্মা যাই হোক না কেন বাঙালি সমাজে সুখ-দুঃখের এই অবেলায় আলোর পথযাত্রায় তাদের সঙ্গে আমিও তো আছি। নিজেকে সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য ভাবতে নিজের মধ্যে একটা তৃপ্তি শান্তি অনুভব করলাম ।
এই মুহূর্তে নামটা ভুলে গেছি বাউল শিল্পী ফেরদৌসী আপা আমাকে বললেন আপনি  আপার সঙ্গে কথা বলুন উনাকে সঙ্গ দিন। আন্টির  সঙ্গে আমার এর আগেও বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে কিন্তু এভাবে আলাপ করবার সুযোগ পায় নাই। আলাপের আদিতে হলো নাম আমিও রবীন্দ্রনাথের মতো কিংবা অমিতের মতো । এরকম গুণী, শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক আলিম চৌধুরীর সহধর্মিননীর পাশে বসে কথা বলার সুযোগ কেন জানি মনে হচ্ছিল স্বপ্নের মত।
এদের আত্মত্যাগ এদের দেশ প্রেম আমাকে বড্ড বেশি আলোড়িত করতো ছোটবেলা থেকেই। সেই মানুষটির পাশের সোপায় বসে তার সঙ্গে নাস্তা করা চা খাওয়া আড্ডা ফটোসেশন এতসব জীবনটাকে কেন যেন পাল্টে দিচ্ছিল মুহূর্তেই। কোন এক ফাঁকে খালাম্মাকে বললাম খালাম্মা আমি তো লিখালিখি করি। তিনি বললেন এটা তো খুব ভালো কথা কি লিখ? আমি বললাম কবিতায় লিখি মূলত। ছোট গল্প উপন্যাস প্রবন্ধ খুব একটা লেখা হয়নি। তবে অনেক সংবাদ লিখেছি।

তিনি বললেন তাহলে বইটা দাও পড়ি কি লিখছো ?কি লেখ একটু পড়তে চাই। আমি বললাম খালাম্মা আমি তো আজকে বই আনি নাই। তবে দায়িত্ব নিয়ে বলছি আপনাকে আমার বই আমি পৌঁছে দিব। 
এর মধ্যে আমার লেখালেখি ,আমার বাবা-মা, আমার পরিবার ,আমার ছোটবেলা, আমার বেড়ে ওঠা আমার পড়ালেখা আমার সাহিত্যচর্চা অনেকগুলো দিক নিয়ে তার সঙ্গে কথা হলো শুধু দাম্পত্য জীবন নিয়ে কোন কথা হলো না। 
আমি তাকে বললাম টাকার পিছনে ছুটতে আমার ভালো লাগেনা। আমি সফল মানুষ হতে চাই, আমি সোনার মানুষ হতে চাই, আমি সোনার বাংলাদেশ গড়তে চাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে, সোনার মানুষ হতে চাই।
তিনি একটি কথা আমাকে খুব জোর দিয়ে বললেন, দেখো টাকার প্রয়োজন আছে টাকা ইনকাম করতে হবে, "তবে সোনার মানুষ হওয়াটা দরকার, সফল মানুষ তুমি হয়েছ, না হলে আজকে এই সফল মানুষদের মাঝে আসতে পারতে না।"এ কথাটা আমার হৃদয়ের খুব গভীরে আলোড়িত করল।তিনি বললেন তাহলে মোবাইল থেকেই যে কোন একটা কবিতা আমাকে পড়াও। আনন্দের সঙ্গে তাকে আমার সম্প্রতি লেখা একটি সমকালীন কবিতা পড়ালাম কবিতার নাম "শতাব্দীর পর শতাব্দী"। তিনি বললেন "সরোয়ার" তুমিতো খুব ভালো লেখো শব্দচয়ন অসম্ভব চমৎকার। সত্যি তখন যে কি ভালো লাগছিল একজন গুণী একজন সম্মানিত একজন মুক্তিযোদ্ধা একজন বুদ্ধিজীবী একজন শহীদ একজন জয়া নাসরিন চৌধুরীর মত মহীয়সী নারীর মুখ থেকে এই মন্তব্য আমার যেন অমৃতর মত লাগল। কবিতাকে নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এর চেয়ে বড় প্রতিদান আর হয় না মনে হয়।
এর মধ্যেই অধ্যাপক স্বপ্নীলের একমাত্র কন্যা সুকন্যার উপস্থিতি আড্ডার মাত্রা কয়েক গুণ ছাড়িয়ে দিল। আমি ওর দিকে হাত বাড়াতে ও হাতটা আগিয়ে দিল আমরা হ্যান্ডশেক করলাম । ফটোসেশন করলাম, এর মধ্যে জুড়ে বসলো আজকের জন্ম উৎসবের সঞ্চালক সাদিয়া বেশ ছিপছিপে স্মার্ট সাবলীল ভাবে পরিচিত হলাম তার সঙ্গেও, আমাদের সবার প্রিয় যার জন্ম উসব উদযাপন করার জন্য আমরা সমবেত হয়েছি কয়েকজন সেই উৎসবের মধ্যমণি অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল তিনি আমাদের মাঝে হাজির হলেন মেরুন রং এর কটি সাদা ফিনফিনে পাঞ্জাবি বেশ লাগছিল। কোন উপহার না নেওয়ায় নিজেকে বেশ অস্বস্তির মধ্যেই থাকতে হয়েছিল পুরোটা অনুষ্ঠান জুড়ে।


অধ্যাপক স্বপ্নীল তিনি যখন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত গণ্যমান্য অতিথিদের সঙ্গে সুকন্যা কে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন কেন জানি আমার মনে হল আমি বলে ফেললাম, স্যার সুকন্যার সঙ্গে কিন্তু আমার পরিচয় হয়ে গেছে আমরা নিজেরা নিজেরাই পরিচিত হয়ে গেছি।
এরপর আমরা সবাই মিলে ফটোসেশন করলাম। অসাধারণ একটা মুহূর্তে জীবনে ক্যামেরাবন্দী হলাম। আমার অনেক বড় প্রাপ্তি এর মধ্যে চলে এসেছেন স্বপ্নীল স্যারের মা তিনি হুইল চেয়ারে করে আমাদের অনুষ্ঠানের প্রথম সারিতে বাউল সংগীত শুনতে এক গম্ভীর তেজ দীপ্ত মহিষী নারী মনে হলো তাকে। যে জননী অধ্যাপক স্বপ্নিল  মতো সন্তান ধারণ করেন সে অবশ্যই রত্নাগর্ভা তার সঙ্গে পরিচিত হলাম।

এরপর আমরা স্নাক্স নিচ্ছিলাম, কফি নিছিলাম পিঠা নিচ্ছিলাম । ঠিক এই মুহূর্তে পীযূষ দা এবং দুজন সফল মানুষের জন্ম উৎসবের পোশাক টাও একই রকমই ছিল। পীযূষ দার সঙ্গে সৌজন্যতা শেষ করলাম ।
কিন্তু ফুল দেওয়া হলো না। ফুলের ব্যাপারে আমার পার্সোনাল একটা এলার্জি আছে। হুটহাট যে কোন জায়গায় গেলে ফুল নিয়েই যাই তা কিন্তু নয় এটা আমার এক ধরনের নিজস্বতা। তবে একেবারেই যে ফুলের কদর করতে যানি না তা কিন্তু নয়।

নিজে থেকেই বৌদি মানে পীযুষদার স্ত্রী তার সঙ্গে আলাপ হল। তার পোশাকে চরণে সবকিছুতেই একটা বৈচিত্র্য ছিল এটা আমাকে খুব মুগ্ধ করেছে। এবারে বাউল সঙ্গীত শুরু হয়ে গেল সঙ্গে আমন্ত্রিত অতিথিদের দুজন সফল মানুষের জন্ম উৎসবে  তাদের প্রতি তাদের ব্যক্তিগত চিন্তা চেতনা এবং অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভাতৃত্ব  বাঙালির ঐতিহ্য কে তুলে আনার এক প্রয়াস ছিল এই জন্ম উৎসব অনুষ্ঠান এবং দুটি পরিবারের মিলনমেলা ।প্রিয় মানুষের মিলনমালা। সেখানে আমি ছিলাম। সব বক্তাই দুজন গুণী ব্যক্তি কে নিয়ে তাদের সম্পর্কে তাদের চিন্তা চেতনা এবং ধারণা সম্পর্কে বললেন।


এরমধ্যে আমার আমাদের সবার প্রিয় অধ্যাপক স্বপ্নীলের স্বধর্মিনী শ্রদ্ধেয় নুসহাত চৌধুরী শম্পা আপা আমাদের মাঝে উপস্থিত হলো। বহুদিন পর এই প্রিয় মানুষটিকে দেখতে পেয়ে, সতি ভীষণ ভালো লেগেছিল। আমি আনন্দ অনুভব করেছিলাম। আপার সঙ্গে কথা হলো, ঠাট্টা হল, আমার বাসা নেই সে কথা ওপেন পীযূষ দার সামনেই বললাম ,থাকার সমস্যা। শম্পা আপা আপা শুধু বলল স্বপ্নীল কে  বললে ওসব ব্যবস্থা করে দেবে। শম্পা আপার কথায় ভেতরে এক ধরনের প্রশান্তি ও সাহস পেলাম।

এরপর এলো পীযূষ দা তার একটা কথা না লিখে পারছি না "আমি সফল মানুষ বলতে সেটাই বুঝি , যারা সফল মানুষের সঙ্গে হাঁটেন এবং হাঁটতে থাকেন, সফল মানুষদের সঙ্গে হাঁটাটাই হলো সফলতা। জীবনে সফলতা বলে কিছু নেই সফলতার দিকে হাটাটাই হল সফলতা।"পীযূষ দার এই কথাটি মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছিলাম। 
যখন নিজের অর্থনৈতিক দৈন্যতা ঢাকা শহরে গৃহহীন বাস্তুচিতোর মত উদভ্রান্তের মতো চলা। সবকিছুকে ছাড়িয়ে মনের মধ্যে এক গভীর শান্তি অনুভব করলাম।
মনে হল আজকের এই অনুষ্ঠানে আসতে না পারলে জীবনের চরম একটা শিক্ষা থেকে আমি বঞ্চিত হতাম।
এরপর এলেন আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় মানবতার নক্ষত্র অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল তিনি খুব একটা বক্তৃতা করলেন না কিংবা গল্পও করলেন না তিনি একটি জীবনের ঘটে যাওয়া গল্প নয় রাজনৈতিক বিভীষিকাময় এক চিত্র সবার চোখের সামনে তুলে ধরলেন, শুধু এটুকু বললেন যে সোনার ছেলে হতে গেলে, হিমালয়ের চেয়েও বেশি বঙ্গবন্ধুর মতো সাহস থাকতে হয়। তিনি বন্ধুত্ব এবং ভালোবাসা। বিএনপির দুষ্কৃতিদের দ্বারা তার বন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ড তিনি মেনে নিতে পারেননি সেই প্রতিবাদের ভাষা থেকে কিছু শিক্ষা দিয়েছেন আমন্ত্রিত অতিথিদের। আমার কাছে সেটাই মনে হয়েছে।
এরপর একে একে অনেকগুলো বাউল সংগীত আমরা উপভোগ করলাম সবাই মিলে। এর মধ্যে উত্তম দা কখন বক্তৃতা করে চলে গেছেন কখন টেরই পাইনি। বাউল সংগীতের শেষের গান মাকে নিয়ে যে গানটি পরিবেশন করা হলো। বাউল শিল্পী নুপুরের গান ভীষণ ভালো লেগেছে।

এরপর আমি অধ্যাপক স্বপ্নীল, স্বপ্নীল ভাইয়ের মা, শাশুড়ি পীযূষ দা ও বৌদির সবাই এক টেবিলে। রাতে ডিনার করে বড় ফুপুর শান্তি টাওয়ারের ফ্লাটে ফিরে এলাম।


মোঃ সরোয়ার জাহান
সম্পাদক ও প্রকাশক
মুক্তআলো২৪.কম