ধর্মজীবীরা কেন থাকবে করের আওতার বাইরে?:অধ্যাপক ডা.মামুন আল মাহতাব

লেখকঃ অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

মুক্ত আলো

প্রকাশিত : ০৭:৫৬ পিএম, ৭ ডিসেম্বর ২০২০ সোমবার

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)


অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল):
আর একটি মাত্র স্প্যান আর কয়েকশ মিটারের অপেক্ষা। এ সপ্তাহেই হবে প্রতীক্ষার অবসান। এখন থেকে পদ্মার কুলও থাকবে, থাকবে কিনারাও। ক’দিন আগেই লিখেছিলাম এই সেতুটি হতে যাচ্ছে আইফেল টাওয়ার কিংবা স্ট্যাচু অব লিবার্টির মতো বাংলাদেশের প্রতীক। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে আজ থেকে ৪৯ বছর আগে ভগ্নস্তূপ থেকে যে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু, এই ডিসেম্বরেই তারই কন্যার হাত ধরে শুরু হবে বাংলাদেশের নতুন যাত্রা। এটি এমন এক বাংলাদেশ যার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশনে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে কোভিডের টিকা ভিক্ষা চান না, বরং আহ্বান জানান টিকা তৈরির টেকনোলজি অবমুক্তকরণের। কারণ আজকের বাংলাদেশ উদ্ভাবন করতে পারে কোভিড ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট আর উৎপাদনও করতে পারে কোভিডের ভ্যাকসিন।

পাশাপাশি এই ডিসেম্বরেই নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিও বাংলাদেশ। হঠাৎ করেই একদল অর্বাচীন ধর্ম ব্যবসায়ী জেহাদ ঘোষণা করেছে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক মুক্তির দ্বারপ্রান্তে। আমাদের আদর্শিক মুক্তিটা প্রত্যাশিত ছিলো এর চেয়েও ঢেড় আগে। ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের পর আমাদের যে ক্রমাগত পিছিয়ে চলা তা আমাদের মানসিক বিকাশের জায়গাটাতে আঘাত করেছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও চেয়ে অনেক বেশি। আর ১৫ আগস্টের মতো একটা ঘটনা ঘটার পর এমনটাই প্রত্যাশিতও। ১৫ আগস্ট কোনো সাধারণ ক্যু ছিলো না। এটি ছিলো স্বদেশি, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াশীলদের পাল্টা আঘাত। ’৪৭-এ ধর্মের ভিত্তিতে ভারতবর্ষকে বিভক্ত করে পাকিস্তান নামক ব্যর্থ রাষ্ট্রটির সৃষ্টি যে কতো বড় ভুল ছিলো তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ আজকের এই বাংলাদেশ। ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র কাঠামোর অসাড়তা আর এর স্বপক্ষে যা কিছু যুক্তি তার সবকিছু ‘নাল অ্যান্ড ভয়েড’ হয়ে গিয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ নামক হাইপোথিসিসটির সফল এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে। ১৫ আগস্টের প্রেক্ষাপট ছিলো এটাই। আর আজকে যখন আবার ১৫ আগস্টকে পেছনে ফেলে অর্থনৈতিক মুক্তির দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ যখন স্বপ্ন দেখছে আদর্শিক মুক্তি আর ’৭১-এর চেতনায় সত্যি-সত্যিই একটা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার, তখন সক্রিয় ১৫ আগস্টের অপশক্তি। করোনাকালের বিভ্রান্তি আর অস্থিরতায় ভর করে তারা হাত দিয়েছে বাংলাদেশের হৃদয়ে। তাদের সেই চেষ্টাও যে ব্যর্থতার ভাগাড়েই যাবে, সেটাও নিশ্চিত। গত ১ তারিখে মুক্তিযোদ্ধা দিবসে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে যে কূল-কিনারহীন মানববন্ধন সেটাই এ ধরনের উক্তি করার শক্তি যোগায়।

তবে অর্থনীতিভিত্তিক একটি পত্রিকায় এমন একটি কলাম লেখার উদ্দেশ্য আমার একেবারেই ভিন্ন। এসব নিযে লেখার, বলার আর করার প্ল্যাটফর্ম আছে আরও অনেক। আজকে বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক মুক্তি তার মূল ভিত্তি আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহ আর বৈদেশিক রেমিটেন্স। যে সমস্ত ধর্মজীবীরা ধর্মকে কেন্দ্র করে নতুন পেশায় পেশাজীবী হয়ে উঠেছেন তাদের কর নেটের আওতায় আনার সময়টা বোধহয় এখন হয়ে গেছে। এদেশে যদি উকিল কর দেয়, কর দেয় ডাক্তার, কর দেয় এমনকি গায়ক-গায়িকা আর লেখক- লেখিকাও, তাহলে হেলিকপ্টারে চড়ে যারা ধর্মকে ভিত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করে চলেছে সেসব ধর্মজীবীরা কেন থাকবে করের আওতার বাইরে? তারা কর দিলে তো বলা যায় না যমুনার উপর বঙ্গবন্ধু রেল সেতুতে ট্রেন ছুটতে পারতো হয়তো আরেকটু আগেই।


লেখকঃ অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

-চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

-সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ।



 

মুক্তআলো২৪.কম