ধর্ষকের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে স্বদেশঃঅধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব

লেখকঃ অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

মুক্ত আলো

প্রকাশিত : ০৬:৫৭ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২০ রোববার

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)


অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল):
ধর্ষণের প্রতিবাদে উত্তাল স্বদেশ। ছাত্র থেকে বুদ্ধিজীবী, পথে নেমেছেন সবাই। ধর্ষণকারীর ফাঁসির দাবিতে যখন শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিবাদী ধর্না, তখন শহরময় ট্রাক নিয়ে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ অপরাজেয় বাংলার। পথে নেমেছেন সবাই। রাজনৈতিক দর্শন আর সামাজিক অবস্থান- সবকিছুর উর্ধ্বে সবার দাবি আর অবস্থান প্রায় অভিন্ন। প্রতিবাদের ভাষা হয়তো ভিন্ন, ভিন্নতা হয়তো দাবি প্রকাশের ভঙ্গিমায়। কিন্তু দু’একজন বাদে দাবি সবার একটাই।

ধর্ষণকারীর জন্য সর্বোচ্চ বিধান রেখে আইন সংশোধনের জন্য সরকারকে আইনি নোটিস দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শিগগির মন্ত্রিসভায় আসছে ধর্ষণবিরোধী আইনের সংশোধনী। জাতিকে এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন আইনমন্ত্রী। দায় এড়ানোর কোনো চেষ্টা করেননি ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক। স্পষ্ট করেছেন ধর্ষণকারীর দায়িত্ব নেবে না দল। সবচেয়ে বড় কথা জাতীয় শিশু দিবসের রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ ব্যাপারে তার মনোভাব স্পষ্ট করেছেন।

ধর্ষকের গ্রেফতারে পুলিশের প্রো-অ্যাক্টিভ ভূমিকা প্রশংসিত হচ্ছে। প্রতিদিনই সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে কোনো না কোনো ধর্ষকের গ্রেফতারের ঘটনা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন এই বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকায় কোনো ধরণের গাফিলতি থাকবে না। হচ্ছেও তাই। প্রশংসনীয় ভূমিকায় মিডিয়াও। করোনাকে পাশে ঠেলে আলোচনায়, শিরোনামে এখন ধর্ষক আর ধর্ষণ। ধর্ষণ আর ধর্ষকের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলায় এসবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে এতসব আশা-জাগানিয়া উদ্যোগের ভিড়ে সংশয়ও কম না। গ্রেফতারই তো শেষ কথা নয়। বিচারের পথটা যে অনেক লম্বা। চাই আলামত, চাই সাক্ষী-সাবুদও। সামাজিকতার ভয়ে বিচারই চাইতে আসেন না ধর্ষণের শিকার অনেক নারী। বিনষ্ট হয় আলামত। সাক্ষ্য দিতে অনীহা অনেকের। প্রত্যেকে যার যার ঘরের চিন্তা করেন। ছ’মাস পর যখন জামিনে মুক্ত ধর্ষক, তখন তাদের ঘরের নিরাপত্তা কোথায়? এ যেন এক শাখের করাত।

উত্তর খুঁজছেন অনেকেই। কেউ সংশোধিত আইনের পক্ষে, তো কেই চাইছেন দ্রুত বিচার। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ধর্ষকের জন্য মানবাধিকার প্রযোজ্য হতে পারে না। মানবাধিকার শুধুই মানুষের জন্য। মানবাধিকারের দাবিদার বনের পশুও, কিন্তু ধর্ষণকারী কখনোই এর দাবিদার হতে পারে না। ধর্ষকের জন্য মানবাধিকারের কথা বলে কেউ যদি ধোঁয়াশা সৃষ্টির চেষ্টা করে, তবে তাদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজন সামাজিক প্রতিরোধের।

কিন্তু এরা কারা? কী এদের অভিসন্ধি? যারা ধর্ষকের বিচারের আগে সরকারের পতন চায় আর ধৃষ্টতা দেখায় সর্বজন শ্রদ্ধেয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিও অশালীন মন্তব্য করার। এরাই কি তারা, যারা ক’দিন আগেই কোটার বিরোধিতায় ‘আমি রাজাকার’ লেখা টি-শার্ট গায়ে রাস্তায় নেমেছিল? এরাই কি তারা, যারা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে ‘ম্যারি মি আফ্রিদি’ প্ল্যাকার্ড হাতে আপনার-আমার সম্মানটুকু বিসর্জন দিয়েছিল? সত্তরের নির্বাচনে যে দুই কোটি বাঙালি নৌকার বদলে অন্য প্রতীকে ভোট দিয়ে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল, এরা তাদেরই বংশধর নয় তো? পাকিস্তানের প্রেতাত্মা এদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। সামাজিক প্রতিরোধের তাগিদটা এখন এদের বিরুদ্ধেও জরুরি। ধর্ষক ধর্ষণ করে মানবতাকে, আর এরা করে জাতিকে, জাত্যাভিমানকে।

লেখকঃ অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

-চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

-সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ।

 

 

 

মুক্তআলো২৪.কম