বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা নতুন করে বিশ্লেষণের দাবি রাখে

মোঃ সরোয়ার জাহান

মুক্ত আলো

প্রকাশিত : ০১:৩১ এএম, ৭ জুন ২০২০ রোববার

বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা নতুন করে বিশ্লেষণের দাবি রাখে

বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা নতুন করে বিশ্লেষণের দাবি রাখে

 

আজ ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর দূঃশাসন অত্যাচারে জর্জরিত বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দৃঢ় কণ্ঠে অন্যায়ের প্রতিবাদ জানিয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রকৃতপক্ষে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত। পাকিস্তানের দুই অংশের সব বিরোধী দলের কনভেনশনে। সাব কমিটিতে বঙ্গবন্ধু প্রথম তার প্রণীত ছয় দফা কর্মসূচি পেশ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার বিরোধিতার কারণে উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। তবে তিনি১১ ই ফেব্রুয়ারি ছয় দফার ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন ঢাকা বিমানবন্দরে লাহোরের কনভেনশন থেকে ফেরার পর।

১৯৬৬ সালের ছয় দফা দাবিরমধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক উত্থাপিত ছয় দফা দাবি বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের ভিত্তিস্তম্ভে দাঁড়ায়। প্রকৃতপক্ষে ছয় দফা দাবি বাঙালির মুক্তির সনদে পরিণত হয়।

আজ ৭জুন ঐতিহাসিক ৫৪তম ছয় দফা দিবস।১৯৬৬ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষিত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণআন্দোলনের সূচনা হয়। এই দিনে বঙ্গবন্ধুর আহবানে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালে ১১ জন বাঙালি শহীদ হন এবং ৮০০ জনেরও বেশি মানুষ হতাহত হন। সেই থেকে ৭ জুন ছয় দফা দিবস হিসাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের মানুষপালন করে আসছে।
এরপর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আপসহীন সংগ্রামের ধারায় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায় পরাধীন বাঙালি জাতি।এ সংগ্রাম এর মধ্যে দিয়ে বাংলার মাটিকে চিরতরের স্বাধীন করার বীজ বপন করা হয়।

বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ছয় দফা দাবির মুখে পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক আইয়ুব খান বিচলিত হয়ে পড়েন। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন ছয় দফা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে অস্ত্রের ভাষায় উত্তর দেওয়া হবে।এরপর ৭জুনের সফল হরতালে আতঙ্কিত হয়ে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় জড়িয়ে ফাঁসিতে ঝুলানোর এবং হত্যা করার চেষ্টা করে। কিন্তু ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের চক্রান্ত ব্যর্থ করে দেয় বাংলার মানুষ।

সময়ের প্রেক্ষাপটে ছয় দফা আজ নতুন করে বিশ্লেষণের দাবি রাখে। কারণ এই ছয় দফায় একটি চূড়ান্ত স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে নিয়ে যায় বাংলার মানুষকে। তরুণ প্রজন্মের কাছে এই ছয় দফার ঐতিহাসিক সত্যটুকু পৌঁছে দেওয়া আজ একান্ত জরুরী।

যেহেতু ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭০ এর ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত ছয় দফা আন্দোলন ছিল তদানীন্তন দেশের রাজনৈতিক তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দু।
ছয় দফার জন্য ৭ জুন মাইলফলক এ কারণে যে, ১৯৬৬সালের এই দিনে ছয় দফা দাবী আদায়ের লক্ষে হরতাল পালন করা হয় এবং এতে বাঙালি নিজের জীবন দিয়ে সে হরতাল স্বতঃস্ফূর্তভাবে সফল করেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম গৌরবময় অধ্যায় ছয় দফার মূল বক্তব্য ছিল প্রতিরক্ষা এবং পররাষ্ট্রনীতি ছাড়া সব ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে। এ দাবির স্বপক্ষে বাঙালি জাতির সর্বাত্মক রায় ঘোষিত হয় ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী করে বাংলার মেহনতী মানুষ।
অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দলকে জনগণকে বিজয়ী করলেও স্বৈরাচারী শাসক বাঙালি কে সরকার গঠন করতে না দিলে আবার ও বঙ্গবন্ধু জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন শুরু করেন।
তারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের।

বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি লক্ষ্যই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা।ছয় দফার ভেতর দিয়েই প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতা পেয়েছিল বাংলার মানুষ।
 

মুক্তআলো২৪.কম