জোটে পাল্টাপাল্টি বহিষ্কার বিএনপি-জামায়াত টানাপড়েন

অনলাইন

মুক্তআলো২৪.কম

প্রকাশিত : ০৭:৪৫ এএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রোববার | আপডেট: ০৩:২৫ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রোববার

আবারও টানাপড়েন বাড়তে শুরু করেছে বিএনপির ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে । দুটি দলেই চলছে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের পালা। গত বুধবার জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের রায়ের পর নতুন করে বিএনপি ও জামায়াতের সম্পর্কে সন্দেহের দোলাচল শুরু হয়েছে।

এর পাশাপাশি ২০ দলীয় জোটে পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারের ঘটনাও অব্যাহত রয়েছে। গতকাল শনিবারও রাজধানীর কাকরাইলে ঈশা খাঁ হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে জোটের শরিক দল ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) মহাসচিবের নেতৃত্বে একটি অংশ দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোর্ত্তজাকে বহিষ্কার করে নতুন কমিটি ঘোষণা করে। একই সঙ্গে দলটির বর্তমান মহাসচিব আলমগীর মজুমদার নিজেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা দিয়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটকে পাঁচ দফা দাবি পূরণে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। এ সময়ের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এ অংশটি ২০ দলীয় জোট ছেড়ে যাবে বলেও জানানো হয়।

শুধু তা-ই নয়, জোট থেকে বেরিয়ে আসা দল বা অংশগুলো মিলে নতুন জোট গঠনেরও ঘোষণা দেওয়া হয়। গতকাল এনডিপির সংবাদ সম্মেলনের সময় সেখানে উপস্থিত ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) একাংশের চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নীলু কালের কণ্ঠকে জানান, নতুন এ জোটের নাম দেওয়া হবে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর ১১টি রাজনৈতিক দল নিয়ে নতুন জোট গঠিত হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

এদিকে শুক্রবার রাতেই এনডিপির মহাসচিবের পদ থেকে আলমগীর মজুমদারকে বহিষ্কার করে দলের অন্য অংশ। গত মাসে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে এনপিপির চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নীলুকে জোট থেকে বহিষ্কার করা হয়। এর পর থেকে এনপিপির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। এর আগে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের পর জোটের আরেক শরিক ন্যাপ ভাসানীও জোট ছেড়ে যায়।

 

এনডিপিতে ভাঙন : গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এনডিপির একাংশের নেতারা জানান, ১২ সেপ্টেম্বর দলের প্রেসিডিয়াম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক এনডিপির চেয়ারম্যান পদ থেকে খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলের মহাসচিব আলমগীর মজুমদারকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও প্রেসিডিয়াম সদস্য আলী নূর রহমান খান সাজুকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করা হয়েছে। আলমগীর মজুমদার জোটের প্রধান শরিক বিএনপিকে পাঁচটি দাবি পূরণ করতে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। দাবিগুলো হলো- ১. ভারতের বিষয়ে জোটনেত্রীকে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। ২. জোটের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা যাবে না। ৩. জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে আন্দোলনের তেমন কোনো কর্মসূচি নেই, কর্মসূচি দিতে হবে। ৪. জোটে অধিকতর গণতন্ত্র চর্চা করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে এবং ৫. ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিষয়ে বিএনপির অবস্থান কী, তা সুরাহা করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে নেতারা বলেন, ‘জোটনেত্রীকে আমরা ৭২ ঘণ্টা সময় দিলাম। এর মধ্যে ওই পাঁচটি বিষয় সুরাহা না হলে এনডিপির জোট থেকে চলে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প থাকবে না।’

সংবাদ সম্মেলনে এনডিপির এই অংশের নতুন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে আলী নূর রহমান খান সাজুকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আলমগীর মজুমদার বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ভারতবিরোধী। অথচ জোটনেত্রী ক্ষমতায় গেলে ভারতের সঙ্গে পানি সমস্যাসহ অমীমাংসিত বিষয়গুলোর ব্যাপারে কী করবেন, তা নিয়ে তিনি কোনো কথা জনগণের কাছে বলছেন না। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ঢাকা এলে তাঁর সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ না করা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, অথচ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা হোটেলে গিয়ে তিনি অপেক্ষা করেছেন। আন্দোলনের কর্মসূচি নেওয়ার ক্ষেত্রে জোটের শরিক দলগুলোর নেতাদের কোনো মতামত নেওয়া হয় না অভিযোগ করে তিনি বলেন, বিএনপি একক সিদ্ধান্তে কর্মসূচি ঠিক করে। ভারতের বিষয়াদিসহ অন্যান্য বিষয়ে জোটনেত্রীর পক্ষ থেকে যদি সৎ উদ্যোগ কিংবা সমাধান না আসে, তাহলে ২০ দলীয় জোটকে ৫০ দলীয় জোটে রূপান্তর করেও এই অনৈতিক সরকারকে হটানো যাবে না।

খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজার বিষয়ে তিনি বলেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর দলের প্রেসিডিয়াম সভা ও ১৯ সেপ্টেম্বর নির্বাহী কমিটির সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। দলের নীতি-আদর্শ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধবিবর্জিত কার্যক্রমের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা কালের কণ্ঠকে বলেন, এনডিপি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটেই আছে। শুক্রবার রাতে আলমগীর মজুমদারকে এনডিপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট রবিউল ইসলামকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করা হয়েছে।

নতুন জোট আসছে : সংবাদ সম্মেলনে শেষে এনপিপির শেখ শওকত হোসেন নীলু কালের কণ্ঠকে বলেন, আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সমমনা ১১টি দল নিয়ে নতুন জোট আসছে। জাতীয় প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন করা হতে পারে। নতুন জোটের ব্যাপারে বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঈশা খাঁ হোটেলের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অতিথি সারিতে জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া এনপিপির চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নীলু, মহাসচিব আবদুল হাই, ন্যাপ-ভাসানীর চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ারুল হককেও দেখা যায়। এ ছাড়া অতিথি সারিতে ২০ দলীয় জোটের শরিক দল লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান সেকান্দর আলী মনি, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ রশীদ প্রধানও উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনের পর হোটেলটিতে মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করে এনডিপির এই অংশ। এতে বিভিন্ন দলের প্রায় এক শ নেতা-কর্মীকে অংশ নিতে দেখা যায়। সংবাদ সম্মেলনে আলমগীর মজুমদারের পাশে বসেছিলেন এনডিপির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মাহবুবুল আলম ফারুক, তপন খান, এ আর জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মির্জা আমিন আহমেদ ইয়ান। এই অংশটির সঙ্গে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন, জয়নাল আবেদিন, মাওলানা আবদুল কাইয়ুম রয়েছেন। এ ছাড়া দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন খান বাদশা, মনিরুজ্জামান মুনির, লিয়াকত আলী, শাহ আলম প্রমুখও রয়েছেন।

ইসলামিক পার্টিতেও ফাটল : ২০ দলীয় জোটের আরেক শরিক ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবদুর রশিদ প্রধান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুল মোবিন হজ করতে সৌদি আরব গেছেন। তিনি দেশে ফেরার পর জরুরি সভা ডেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হতে পারে।

এনডিপি কার্যালয়ে বিক্ষোভ ও পাল্টা বহিষ্কার : এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজার নেতৃত্বে গতকাল নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে নেতা-কর্মীরা উপস্থিত হয়ে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এনডিপির ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈশা, দপ্তর সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিন, সহদপ্তর সম্পাদক মো. মুসা, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ক্বারী আবু তাহের, সহপ্রচার সম্পাদক লোকমান হোসেন। এর আগে শুক্রবার রাতে এনডিপির জরুরি বৈঠকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ ও নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকায় এনডিপির মহাসচিব পদ থেকে আলমগীর মজুমদারকে বহিষ্কার করা হয়। গতকালের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা। সমাবেশে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে আলমগীর মজুমদারকে বহিষ্কার করায় নেতারা সন্তোষ প্রকাশ করেন। যারা দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য ষড়যন্ত্র করবে তাদের এনডিপিতে কোনো ঠাঁই নেই।

ভাঙন হয়নি- মির্জা ফখরুল : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল কালে বলেন, ‘আমাদের ২০ দলীয় জোটে কোনো ভাঙন হয়নি। সরকার বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ তিনি বলেন, জোটের শরিক দু-একটি দলের মধ্যে সমস্যা দেখা দিয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে, যদিও এটা তাদের নিজস্ব দলের ব্যাপার। এখানে ২০ দলীয় জোটের কিছু নয়।

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, সরকার দীর্ঘদিন থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছে জোট ভাঙার। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার মধ্যে পড়েছে বলেই নানা ষড়যন্ত্র করছে। তাই জনবিচ্ছিন্ন ও আতঙ্কিত হয়ে তারা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই তারা ক্ষমতাকে অবিনশ্বর করতে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে। তাদের কথাবার্তা, আচার-আচরণের মধ্য দিয়ে পরিষ্কার হয়েছে যে, আওয়ামী লীগ আবারও একদলীয় শাসনের দিকে যাচ্ছে। এ জন্যই নানাভাবে তারা বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট ভাঙার ষড়যন্ত্র করছে।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে জোটের নেতা-কর্মীদের সতর্ক ও সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল আরো বলেন, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আন্দোলন জোরদার করতে হবে।

বৈঠকে উপস্থিত একটি শরিক দলের মহাসচিব বলেন, ‘জোট ভাঙার যত ষড়যন্ত্রই সরকার করুক না কেন, আমাদের জোট ভাঙতে পারবে না। কারণ যারা জোট থেকে চলে গেছে তাদের আগেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের পদে অন্যদের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে।’

জামায়াতের সঙ্গেও টানাপড়েন : বিএনপির সিনিয়র নেতারা জামায়াতের সঙ্গে টানাপড়েন নিয়ে কথা না বললেও মধ্যম সারির ও তৃণমূল নেতারা বলেন, জামায়াত আর বিএনপির আদর্শ এক নয়। জামায়াতকে বেশ আগে থেকেই বিএনপি বিশ্বাস করছে না; সন্দেহের চোখে দেখছে। সাঈদীর রায়ের পর এই সন্দেহ আরো বেড়েছে। কিন্তু প্রকাশ্যে এসব কথা বললে বিএনপির দুর্বলতা প্রকাশ পায় বলে তারা মুখ বুজে আছে।

গত ঈদুল ফিতরের পর সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলনে নামা হবে- এ রকম ঘোষণা দেওয়ার পরও বিএনপি আন্দোলন করতে পারেনি। খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রমজানের বিভিন্ন ইফতার পার্টিতে আন্দোলনের কথা বলেছেন। ঈদুল ফিতর গেল, আবার আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে ঈদুল আজহা। এই মুহূর্তে জামায়াত আগের মতো আন্দোলন চায় না বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। রাজনৈতিক ইস্যুতে তারা কিছুটা পিছুটান দিয়েছে। তাই আন্দোলনের কথা বললেও বিএনপি কঠোর আন্দোলনের ডাক দিতে ভরসা পাচ্ছে না। এ ছাড়া যেকোনো ঘটনায় জামায়াতকে নিয়ে বিএনপি যেভাবে পর্যবেক্ষণে থাকে, এবার বিএনপিকে নিয়ে জামায়াত সে রকম পর্যবেক্ষণে রয়েছে। বিএনপির আন্দোলন কতটুকু শক্তিশালী হবে সেই পর্যবেক্ষণ করছে জামায়াত।

মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের নেতাদের বিচারের কাঠগড়ায় আনার পর থেকেই জামায়াত কঠোর আন্দোলন শুরু করেছিল। কিন্তু দেশের মানুষ এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দেয়নি বলে তা দীর্ঘায়ু হয়নি। জামায়াতের কর্মসূচিতে বিএনপির সমর্থনও জোরালো ছিল না। সেই থেকে জামায়াত-বিএনপির মধ্যে সন্দেহ ও দূরত্ব বাড়তে থাকে। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোটগত কোনো কর্মসূচিও নেই। বিএনপির সন্দেহ- কয়েকটি শর্তে জামায়াত সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেছিল। জামায়াত কিছুটা লাভবানও হয়েছে বলে মনে করে বিএনপি। এবার আপিল বিভাগে সাঈদীর রায় নিয়েও বিএনপি কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তেমনি হরতালের প্রতিও বিএনপির সমর্থন নেই।

২০ দলীয় জোটের একাধিক নেতা জানান, বর্তমানে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে যেভাবে দূরত্ব বাড়ছে তাতে আগামী দিনে সরকারবিরোধী আন্দোলন সফল হবে কি না তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ ও সংশয়। জাগপা, ন্যাপ, এনডিপি ও লেবার পার্টির কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, জামায়াত এমন একটা দল, তারা সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে আবার বিএনপির সঙ্গেও সম্পর্ক রাখে। যে দলকে যেখানে কাজে লাগাতে পারে, সেই চেষ্টাই করছে জামায়াত।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক বিভিন্ন দলের কয়েকজন নেতা জানান, জামায়াত নিয়ে আগে থেকেই সন্দেহ ছিল যে, জামায়াত তাদের নেতাদের বাঁচানোর জন্য সরকারের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জামায়াত কতটুকু সফল হবে তা বলা কঠিন। তবে বিএনপির সঙ্গে আগের মতো সুসম্পর্ক নেই এটা নিশ্চিত। শরিক দলের এক নেতা বলেন, এর পরও বিএনপির একটি অংশ জামায়াতকে আন্দোলনের জন্য পাশে চায়। অন্য একটি অংশ বলছে, জামায়াত না থাকলে বিএনপির বড় ক্ষতি হবে না। তবে ঈদুল আজহার পর সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হলে জামায়াতের ভূমিকা স্পষ্ট হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিএনপির আদর্শ আর জামায়াতের আদর্শ কোনো দিন এক হবে না। বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল। বিএনপি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে আর জামায়াতের ভূমিকা ভিন্ন। জামায়াত কী তা দেশের মানুষ জানে। দুই দলেরই আদর্শিক ও কৌশলগত পার্থক্য রয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত নেতাদের বাঁচানোর জন্য সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক করবে কি করবে না সেটা তাদের দলীয় ব্যাপার। কিন্তু বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দল জামায়াত। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন কারণে দুই দলের মধ্যকার সন্দেহ ও দূরত্ব বাড়তে পারে আবার অভিন্ন ইস্যুতে সব দল ঐক্যবদ্ধ হবে, রাজনীতির এটা স্বাভাবিক চরিত্র। তবে ভবিষ্যতে সংলাপের জন্য সরকারবিরোধী আন্দোলনে শরিক দল হিসেবে জামায়াত থাকবে বলে আমার বিশ্বাস।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় শূরার এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গণতন্ত্র ও জনগণের দাবির সঙ্গে জামায়াত সব সময় একমত। জনগণের কল্যাণে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হবে না জামায়াত। সব দাবির সঙ্গে যে বিএনপি একমত থাকবে এটা জামায়াতও বিশ্বাস করে না।’