কয়েছ আহমদ বকুল এর কলাম-

`অরণ্যে রোদন অথবা সমকালীন বিলাপ`

যুক্তরাজ্য থেকে কবি, লেখকঃ কয়েছ আহমদ বকুল

মুক্তআলো২৪.কম

প্রকাশিত : ০৫:২৫ পিএম, ২৩ জুলাই ২০১৪ বুধবার | আপডেট: ০৯:১৬ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বৃহস্পতিবার

শিরোনামটি ধার করা। সুলেখক, প্রণম্য আনিসুল হক অরণ্য রোদন` নামে একটি লেখা লেখেন প্রথম আলোতে। আজ লেখায় তিনি কিছুটা আলোচিত হবেন সুতারাং শিরোনামের একাংশ জুড়ে জড়িয়ে দিলাম তাঁরই শিরোনাম।

৫ই জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের প্রাক্কালে চিহ্ণিত কিছু জাতীয় দৈনিকের পাশাপাশি বহুল প্রচারিত প্রথম আলোর অবস্থানও ছিল প্রবল ভাবে নির্বাচন বিরোধী। ঠিক সেই সময়ে আনিসুল হকের সাথে  নির্বাচন নিয়ে আলোচনার একটা সুযোগ হয়েছিল। উনাকে বলেছিলাম `প্রথম আলো এভাবে নির্বাচনের বিরোধীতা করা ঠিক হচ্ছেনা। আমরা সবাই জানি নির্বাচনের প্রক্রিয়াটা সঠিক নয় কিন্তু বহু প্রতিক্ষিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য এই নির্বাচন মেনে নেয়া ছাড়া আমাদের কোন বিকল্প নেই`। উনি বলেছিলেন ` প্রথম আলো হয়তোবা চায় নির্বাচন হোক,  না হয় অন্য অনেকের মতো আরো অনেক গাঢ় ভাবে কিছু লিখতে পারতো তারা। তবে একটা সুষ্ট নির্বাচন হলে ভালো হতো, তাতে আওয়ামীলীগ বিরোধী দলে চলে গেলেও আমরা যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবীতে রাজপথে থাকতাম। বি এন পি কোন ভাবেই ওদেরকে ছেড়ে দেয়ার দুঃসাহস দেখাবে না`। আমি উনার কথায় উতলা হয়ে উঠেছিলাম, আবেগ প্রবন হয়ে উঠেছিলাম, ব্যাকুল হয়ে বলেছিলাম ` না স্যার না, এই বার আওয়ামীলীগ যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে না পারলে এই ভু খন্ডে আর কোনদিন যুদ্ধাপরাধের বিচার হবে না`। উনি আমাকে আশ্বস্থ করেছিলেন, শান্তনা দিয়েছিলেন। বোধকরি সেই শান্তনা আওয়ামীলীগের ক্ষমতার লোভের কাছে ফ্যাকাশে হতে চলেছে।
এদেশে ৫ই জানুয়ারির মতো একটা নির্বাচন কেন হতে দেয়া হয়েছিলো এই সরকার হয়তো তা ভুলে গেছে। প্রজন্ম মঞ্চ খন্ডিত করে সরকার হয়তো ভাবছে তারা নিরাপদ। মেরুদন্ডহীন বি এন পি দেখে হয়তো তারা উচ্চকিত। কিন্তু যে সাধারণ মানুষ নীরব থেকে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে মেনে নিয়েছিলো কেবল খুব শীঘ্রই যুদ্ধাপরাধের বিচার দেখার জন্য তাঁরা কিন্তু নিজেদেরকে প্রস্তুত করছে তাদের অরণ্যে রোদনের বদলা নেবার জন্য।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে যুক্তরাজ্য সফরে রয়েছেন। এই বার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণের পর বৃটেনে  এটা তাঁর প্রথম সফর। একজন নব নি্র্বাচিত সরকার প্রধানকে যে মর্যাদা ও অভ্যর্তনা দেয়া হয় আমাদের প্রধানমন্ত্রী কি সেটুকু পেয়েছেন? বিমানবন্দরে এখানকার কোন মন্ত্রী এমপি পর্যন্ত উনাকে স্বাগত জানাতে জাননি, এটা উনাকে অবহেলা নয়, আমাদের লাল সবুজ পতাকাকে অপমান। কিন্তু কেন? এই প্রশ্নের জবাব কি খুঁজবেন না শেখ হাসিনা?
বৃটেন প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত শেষে লন্ডনে বাংলাদেশি পরিচয়ে যে দৃর্বৃত্তরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরকে ঘিরে অসাদাচারন করেছে তারা বাংলাদেশকেই অপমান করেছে। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের জাতীয় নেতাদের প্রতি (তিনি যেই দলেরই হোন না কেন) অসম্মানজনক আচরন সমর্থনযোগ্য নয়। লন্ডনের এই দুর্বৃত্তদের এখানকার আইনের আওতায় আনা  জরুরী। আর এই জরুরী কাজটা করতে হবে ইউ কে সরকারকেই। কিন্তু তাঁরা করবে কি? ঐ দুষ্কৃতিকারীদের ছবি সহ পরিচয় ও রাজনৈতিক পরিচয় প্রায় পরিষ্কার, বেশীর ভাগই বাঙ্গালী হলেও বাংলাদেশের নাগরিকই নয়। বাংলাদেশের আভ্যন্তরিন কোন বিষয় নিয়ে এই দূর দেশে এমন বেহায়াপনা করার অধীকারই নেই তাদের। এখন দেখার বিষয় একজন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এমন উদ্যত আচরনের পর তাদের নাগরিককে কি ভাবে আইনের আওতায় আনে যুক্তরাজ্য।

পাদটীকা
----------
দেশে বিদেশে চরম ভাবে বিপর্যয়ের মুখোমুখি হওয়ার আগে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতার মোহিত বাতাসে মন্দ্রিত না হয়ে বাস্থবতার মুখোমুখি হওয়া খুব দরকার, এখনই দরকার। যুদ্ধাপরাধের বিচার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করে ফেলতে হবে। নিজেদেরকে রক্ষার জন্যে হলেও সরকারের বাচাল মন্ত্রীদের নিয়ে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত সভায় বসতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে।

কয়েছ আহমদ বকুল
কবি লেখক
যুক্তরাজ্য