প্যারিসে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইস্রাইল বিরোধী বিক্ষোভ,সংঘর্ষ-আটক ৩৩

ফ্রান্সের বিশেষ সংবাদদাতাঃ দোলন মাহমুদ

মুক্তআলো২৪.কম

প্রকাশিত : ১১:০৪ এএম, ২০ জুলাই ২০১৪ রোববার | আপডেট: ০৩:৪৫ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ শনিবার

শনিবার দুপূরের পর দক্ষিন প্যারিসের বারবেজ এলাকায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইস্রাইল বিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ব্যাপক টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। বিক্ষোভকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল এবং বোতল ছুড়তে থাকে। প্রায় তিন সহস্রাধিক বিক্ষোভকারিকে নিয়ন্ত্রনে পুলিশকে হিমশিম খেতে দেখা যায়। পরে প্যারিসের পুলিশ পার্শ্ববর্তী Val-de-Marne এবং Seine-Saint-Denis থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ডেকে পাঠান। বিক্ষোভকারীরা ইস্রাইলকে হত্যাকারী, সন্ত্রাসী রাষ্ট্র, ইহুদীরা খুনী বলে গালি দিতে থাকে। এছাড়া তারা ইস্রাইলের কয়েকটি পতাকায় আগুন দেয়। পুলিশ অন্তত ৩৩ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে। এ সময় অনেক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়, তার মধ্যে ইহুদীদের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য। মেট্রো ও যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। বিক্ষোভ কারীরা প্রেসিডেন্ট ফঁসে ওলান্দকে ইস্রাইলের দোষর বলে গালি দেয়। এদিকে সরকার ঘোষণা দিয়েছেন ইস্রাইল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধ বিরতি প্রতিষ্ঠাকে ফ্রান্স সরকার অগ্রাধিকার হিসাবে রেখে কাজ করছে। এদিকে আজও ইস্রাইলের হামলায় প্রায় ৫০জন ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। মিশরের মধ্যস্থতায় গত ১৫ই জুলাই যুদ্ধ বিরতির একটি সম্ভাবনা তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত তা ভেস্তে যায়। সাময়িক বিরতির পর ইস্রাইল আবারও নতুন করে গাজার বেসামরিক এলাকায় বোমা বর্ষণ শুরু করে। নিহতের সংখ্যা দুইশত ছাড়িয়ে গেছে। ইস্রাইল লক্ষাধিক গাজাবাসিকে পশ্চিমতীর ছেড়ে যেতে বিমান থেকে লিফলেট ছাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে বুধবার গোটা ফ্রান্স জুড়ে যুদ্ধ বিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। এ সকল বিক্ষোভে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের অনেক ডেপুটিও উপস্থিত ছিলেন। লিয়ন, গ্রেনভ, নান্ত, স্টারবোগ প্রভৃতি বড় বড় শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। স্টারবোগে একাধিক ডেপুটি বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন। গ্রিন পার্টির ইভা জলি, জস বভে, সমাজতান্ত্রিক দলের এডওয়ার্ড মারটীন প্রমুখ অংশ নেন। গত কয়েকদিন থেকে বিশ্বের একমাত্র ইহুদী রাষ্ট্র (যে রাষ্ট্রের জম্ম কেবল ইহুদীদের জন্য) ইস্রাইল, নিরস্ত্র নিরীহ ফিলিস্তিনীদের উপর নির্বিচার বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনায় সারা বিশ্ব জুড়ে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসেও গত রবিবার স্মরণ কালের সর্ববৃহৎ প্রতিবাদ র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উত্তেজিত জনতা দুটি সিনাগিগের (ইহুদীদের ধর্মীয় প্রতিষ্টান) সামনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফ্রান্সে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। প্যারিসের মেয়র `অ্যান ইদালগো` অপ্রীতিকর ঘটনার আশংকায় প্যারিসে সমস্ত সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এ পরিস্থিতিতে প্যারিসের প্রধান মসজিদ থেকে মুসলমানদের শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়। মসজিদের পক্ষ থেকে সি.এফ.সি.এম (CFCM) এর প্রেসিডেন্ট দালীল বূবাকর (Dalil Boubakeur) বলেন, "কোন রকম ব্যতিক্রম ছাড়া সব ধরনের উপাসনালয়ের সম্মান রক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এমন কিছু করা উচিৎ হবে না যা ফ্রান্সের জীবন ধারার সাথে সাংঘষর্ীক হয়। পাশা-পাশি আমরা সরকারের কাছে ইহুদী সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা যেমন দাবী করছি, তেমনি যেকোন নাগরিকের জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সুরক্ষার দাবী জানাচ্ছি"। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেরনার্ড কাজিনুভ (Bernard Cazeneuve) বলেন, জন-নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশংকায় আমরা প্রতিবাদ রালি নিষেধ করেছি । উল্লেখ্য ফ্রান্স একটি ধর্ম নিরপেক্ষ (Laïque) রাষ্ট্র। এখানে রাষ্ট্রের কোন নিজস্ব ধর্ম নেই। এদিকে প্যারিসে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সমস্ত বিক্ষোভের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাকে আইন বিভাগও গতকাল সমর্থন জানায়।