প্রতীক বরাদ্দে ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ করছে নির্বাচন কমিশন: এনসিপি
মুক্তআলো২৪.কম
মুক্ত আলো
প্রকাশিত : ০৭:১৫ পিএম, ১৯ অক্টোবর ২০২৫ রোববার

প্রতীক বরাদ্দে ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ করছে নির্বাচন কমিশন: এনসিপি
নিবন্ধনের প্রক্রিয়ায় ‘শাপলা’ প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সম্প্রতি ইসি সচিবালয় থেকে পাঠানো চিঠির কড়া ভাষায় জবাব দিয়েছে দলটি।
এনসিপির দাবি, ‘শাপলা’ প্রতীককে ঘিরে জনসাধারণের সঙ্গে তাদের যে গভীর মানসিক ও আবেগঘন সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তা উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। কমিশনের স্বেচ্ছাচারী প্রতীক তালিকা থেকে বিকল্প কোনো প্রতীক গ্রহণ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
এর আগে গত ১৪ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) ১৯ তারিখের মধ্যে অন্য প্রতীকের নাম দিতে বলা হয়েছে। এই সময়ে নাম না দিলে কমিশন স্বীয় বিবেচনায় একটি প্রতীক বরাদ্দ দেবে।’
প্রতীক বরাদ্দ সংক্রান্ত ইসির চিঠির জবাবে এনসিপি বলেছে, এনসিপি গত ২২ জুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের আবেদন করে এবং ‘শাপলা’ প্রতীক সংরক্ষণের আবেদন জানায়। এর ধারাবাহিকতায় দলটি ৩ আগস্ট, ২৪ সেপ্টেম্বর এবং ৭ অক্টোবর একাধিক দরখাস্ত দাখিল করে প্রতীকের তিনটি বিকল্প—১. শাপলা, ২. সাদা শাপলা, এবং ৩. লাল শাপলা—বরাদ্দ দিতে অনুরোধ জানায়। তারা প্রতীকটিকে দৃশ্যমান করার জন্য শাপলার ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণও কমিশনে উপস্থাপন করেছিল।
এনসিপির অভিযোগ, তাদের বারবার অনুরোধ অনিষ্পন্ন অবস্থায় রেখে ইসি সচিবালয় ১৩ অক্টোবর একটি চিঠি পাঠায়। এনসিপি এই চিঠিকে ‘বিধি-বহির্ভূত’, ‘অনাকাঙ্খিত’, ‘স্বেচ্ছাচারী’ এবং ‘বেআইনি’ আখ্যা দিয়েছে। দলটির দাবি, ইসি এই চিঠির মাধ্যমে তাদের ইচ্ছামতো প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে দেওয়ার ‘হুমকি’ দিচ্ছে।
দলটি সংবিধানের ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে বলেছে, সব নাগরিক ও রাজনৈতিক দলের প্রতি সমতা এবং আইনের আশ্রয়ে ন্যায্য আচরণ নিশ্চিত করা ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব। প্রতীক বরাদ্দের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ইসি এই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেতে পারে না।
এনসিপির দাবি, নির্বাচন কমিশনকে লিখিতভাবে জানাতে হবে কোন নীতিমালা বা মানদণ্ডের ভিত্তিতে ‘শাপলা’ প্রতীকটি তালিকাভুক্ত প্রতীকের বাইরে রাখা হয়েছে। যদি কোনো নীতিমালা না থাকে, তবে তা অবিলম্বে প্রণয়ন ও প্রকাশ করতে হবে।
এনসিপি আরও উল্লেখ করেছে, নিবন্ধন প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপে যেতে হলে কমিশনকে ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮ ’–এর বিধি ৭ (২) এবং তফসিলের ফরম-২ বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণ করে দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে।
ওই বিধিমালার ফরম-২ অনুযায়ী, বিজ্ঞপ্তিতে অবশ্যই রাজনৈতিক দলের প্রার্থিত প্রতীকের নাম উল্লেখ করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এনসিপি বলেছে, কমিশনের তরফে এর ব্যত্যয় করা বা নিজের ইচ্ছামতো প্রতীককে দলটির প্রার্থিত প্রতীক হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
জবাবের শেষাংশে এনসিপি প্রতীক ইস্যুতে ইসির আচরণকে ‘অন্যায্য’ বলে অভিহিত করেছে। তাদের মতে, কমিশনের এই আচরণ জনমনে প্রশ্ন তৈরি করেছে যে, ইসি জনগণের সঙ্গে তার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সম্পর্ক এড়িয়ে চলছে কিনা।
এনসিপি মনে করে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন ‘ফ্যাসিবাদী আমলের পাতানো নির্বাচন আয়োজনকারী কমিশনের’ থেকে নিজেদের কার্যক্রমকে আলাদা করতে পারছে না এবং দেশবাসীকে আবারও একটি সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এনসিপির প্রতি কমিশনের বৈরী আচরণ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে কমিশনের সদিচ্ছা ও সক্ষমতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।
এনসিপি আশা করছে, ইসি ২০০৮ সালের নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার বিধি ৯ (১) সংশোধন করে দ্রুত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অনুকূলে ‘শাপলা’, ‘সাদা শাপলা’ বা ‘লাল শাপলা’ থেকে যেকোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ করবে।
মুক্তআলো২৪.কম