লন্ডনের বৈঠকে রাজনীতির সব হিসাব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে : গোলাম মাওলা

মুক্তআলো২৪.কম

মুক্ত আলো

প্রকাশিত : ০৭:০০ পিএম, ২১ জুন ২০২৫ শনিবার

লন্ডনের বৈঠকে রাজনীতির সব হিসাব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে : গোলাম মাওলা রনি

লন্ডনের বৈঠকে রাজনীতির সব হিসাব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে : গোলাম মাওলা রনি


লন্ডনে তারেক রহমান ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনের সব হিসাব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ ও কলাম লেখক গোলাম মাওলা রনি। 

তিনি বলেছেন, গত ১০ মাস ধরে সরকারের যে ধারাবাহিকতা ছিল, সরকারের যে এটেনশন ছিল, এগ্রি ছিল, ডিসগ্রি ছিল, এবং সরকারের যে নোট অফ ডিসেন্ট ছিল পুরো জিনিসটি এলোমেলো হয়ে গেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যারা বন্ধু তারা দূরে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আর সেই জায়গাতে বিএনপির সভাপতির এগিয়ে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
শনিবার (২১ জুন) ইউটিউব চ্যানেলের আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

গোলাম মাওলা রনি বলেন, এই বৈঠকের এখন পর্যন্ত এক সপ্তাহ শেষ হয়নি -আমি ভিডিওটি যে সময়টিতে করছি- এই এক সপ্তাহের মধ্যে যে সম্ভাবনাগুলো অনিবার্য ছিল অর্থাৎ বিএনপির সঙ্গে সরকারের বন্ধুত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমান সাহেবের লেনাদেনা এবং রাজনীতিতে প্রাপ্তি উভয়ের জন্যই প্রাপ্তি, সেই জায়গাগুলোতে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে এবং নানা রকম গল্পগুজব এবং সমীকরণে পুরো বৈঠকটি উভয় পক্ষের জন্য বুমেরাং হওয়ার মতো আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। 

সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, আপনারা জানেন, এই বৈঠকের তিনটি পার্ট ছিল। প্রথম পার্ট হলো, জনাব তারেক রহমান সাহেব তার বাসা থেকে গাড়িতে করে হোটেল পর্যন্ত এলেন।
দ্বিতীয় পার্ট হলো, গাড়ি থেকে তিনি হোটেল লবি হয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের রুমে ঢুকলেন। তারপর আবার সেই বৈঠক শেষে তিনি আবার গাড়িতে উঠলেন। এর আরেকটি অংশ হলো, যৌথ বিবৃতি। যৌথ বিবৃতি মানে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, প্রেসসচিব শফিকুল আলম এবং নিরাপত্ত উপদেষ্টা জনাব খলিলুর রহমান তারা যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তা একটা অংশ।
এর বাইরে এক্সক্লুসিভলি আরেকটি অংশ হলো, ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তারেক রহমান সাহেবের দেড় ঘণ্টাব্যাপী একান্ত বৈঠক ক্লোজডোর বৈঠক। এই তিনটি অংশ আগামী দিনে রাজনীতির জন্য একটা যেভাবে শুভপরিণয় বয়ে নিয়ে আসতে পারে। একইভাবে আবার মহা কেলেঙ্কারি ঘটার সম্ভাবনা বেশি দেখা দিয়েছে। 

গোলাম মাওলা রনি বলেন, সেই কারণে আমি লন্ডন গেট শব্দটি ব্যবহার করেছি। লন্ডন গেট কেলেঙ্কারি শব্দটি ব্যবহার করিনি।
যারা ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারি সম্পর্কে জানেন তারা তো জানেন। এর সঙ্গে এই লন্ডন গেটের কী সম্পর্ক রয়েছে সেটা বলব। আর যদি এটা লন্ডন গেট কেলেঙ্কারি হয় তাহলে সেক্ষেত্রে কি কি হতে পারে সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। তার আগে ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারি নিয়ে একটু সংক্ষেপে বলে নেই। 

তিনি বলেন, আপনারা জানেন, আমেরিকার একটা বিখ্যাত হোটেলের নাম ওয়াটার গেট হোটেল।৭০-এর দশকে যখন নির্বাচন হচ্ছিল, প্রেসিডেন্ট ছিলেন রিচার্ড নিক্সন। তিনি যে দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন তার বিপরীত পক্ষ ছিল ডেমোক্রেট। তিনি ছিলেন রিপাবলিকান দলীয়। রিচার্ড নিক্সন এবং তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন হেনরি কিসিঞ্জার। তো ৭০-এর দশকের একেবারে শুরুর দিকে যখন জেনারেল ইলেকশন হচ্ছে প্রেসিডেনশিয়াল ইলেকশন হচ্ছে ঠিক সেই সময়ের ঘটনা। তখন সেই ওয়াটার গেট হোটেলে ডেমোক্রেট দলের অর্থাৎ বিরোধী দলের একটা গোপন বৈঠক হচ্ছিল। সেই বৈঠকে রিপাবলিকান দলের লোকজন আরো স্পষ্ট করে বললে সিআইএ বা সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে প্রেসিডেন্ট সেখানে গোপনে টেপ রেকর্ডার স্থাপন করেছিলেন। তখন ওটাই ছিল সবচেয়ে বড় 

টেকনোলজি। এখন তো অনেক মাইক্রোচিপ চলে এসছে। বলতে গেলে আপনার সব কর্মকাণ্ড কথাবার্তা অডিও এবং ভিডিও করার জন্য একটা ছোট মাইক্রোচিপ রয়েছে। এরকম একটা টেক রেকর্ডার সেখানে স্থাপন করা হয়েছিল ওদের কথাবার্তা রেকর্ড করার জন্য যে ওরা গোপনে গোপনে কি কি পলিসি নিচ্ছে রিপাবলিকান দলের বিরুদ্ধে। কি কি বুদ্ধি করছে পরামর্শ করছে। এটা বর্তমান জামানাতে ভাত মাছ। এটা কোনো সমস্যা না।

তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের অফিসে বিএনপি যদি এরকম একটা টেপ রেকর্ডার দিয়ে আসে, মাইক্রোচিপ দিয়ে আসে বা বিএনপির অফিসে যদি একটা মাইক্রোচিপ দিয়ে আসে রুহুল কবির রিজভী সাহেব রুমের মধ্যে কি করেন কোথায় কি করেন, সেই জিনিসগুলো পরবর্তীতে প্রকাশ হয় এগুলো নিয়ে কেউ এখন আর ছি ছি করবে না। কিন্তু ৭০-এর দশকে পৃথিবীর যে নৈতিকতা তা এখনকার যে ভ্যালুস ও মূল্যবোধ রয়েছে তার থেকে অনেক অনেক স্পর্শকাতর ছিল। ভালো ছিল। ফলে ওটা যখন জানাজানি হয়ে গেল, সারা পৃথিবীতে ছি ছি রব পড়ে গেল এবং এই কারণে রিচার্ড নিক্সনকে যে বিপদের মধ্যে পড়তে হচ্ছিল তা বলার মতো নয়। এবং রিপাবলিকান পার্টি বহুদিন পর্যন্ত ঘৃণিত ছিল, নিন্দিত ছিল। এই ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারির জন্য পরবর্তীতে পৃথিবীতে যখন এরকমই একান্ত ব্যক্তিগত গোপনীয় বিষয়ে অন্য কেউ নাক গলাতে চায় তখন সেখানে এই ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারি শব্দ চলে আসে। 
এক্ষেত্রে যেটা হচ্ছে তা হলো, আমরা যে দৃশ্যগুলো দেখেছি সে দৃশ্যের প্রথম পার্ট তারেক রহমান সাহেবের সঙ্গে নিঃসন্দেহে সরকারের কেউ বা সরকারি এজেন্ট তার বাসায় তার সঙ্গে বৈঠক করেছে। টেলিফোনে কথা বলেছে। স্কাইপিতে কথা বলেছে এবং তাকে রিসিভ করার জন্য তার বাসা পর্যন্ত গেছে। তার গাড়িতে এসেছে অথবা তার পেছনে সামনের গাড়িতে ছিল। এই যে কথাবার্তা হলো সেই কথাবার্তাগুলোর অডিও এবং ভিডিও ফুটেজ ইন ডিটেইলস তা বিএনপির পক্ষেও যেতে পারে আবার সরকারের পক্ষেও যেতে পারে। বিএনপির পক্ষ থেকে করা হতে পারে, সরকারের পক্ষ থেকে করা হতে পারে। এবং এগুলো যদি পরবর্তীতে ব্যবহার করা হয়, যদি এই বৈঠকের ফলাফল ইতিবাচক না হয় এবং প্রতিপক্ষকে অপদস্ত করার জন্য এসব কথাবার্তা যখন সামনে চলে আসবে, বিশ্বাস করেন রাজনীতিতে সুনামি হয়ে আসবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য, তার লোকজনের জন্য এবং তারেক রহমান সাহেবের জন্য। কারণ তাদের মধ্যে অনেক আন অফিশিয়াল কথাবার্তা হতে পারে। 








মুক্তআলো২৪.কম