এখন মেসির সঙ্গে দি মারিয়া

অনলাইন ডেস্ক

মুক্তআলো২৪.কম

প্রকাশিত : ০৬:০৪ এএম, ৩ জুলাই ২০১৪ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০২:৪৪ পিএম, ৩ জুলাই ২০১৪ বৃহস্পতিবার

৮৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেরা গোলের আগে ডিয়েগো ম্যারাডোনার সামনে তিনটি পথ খোলা ছিল। একটি হলো আনমার্কড বুরুচাগার দিকে ঠেলতে পারতেন, অন্যটি পোস্টের সামনে দাঁড়ানো ভালদানোর পায়ে দেওয়া আর তৃতীয়টি হলো ইতিহাসের পথে। ডিয়েগো শেষ পথটাই ধরেছিলেন, সুবাদে সেটি হয়েছে ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে লিওনেল মেসির সামনেও ছিল তিনটি পথ খোলা। একটি ওই জায়গা থেকে নিজে শট করা, অন্যটি দি মারিয়ার পায়ে দেওয়া আর তৃতীয়টি হলো বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়া। শেষেরটি হলো শঙ্কা, সেটি মনে পড়তেই লিও নিজে গোলে শট নেওয়ার বিলাসিতা দেখাতে পারেননি, সামনে দুই ডিফেন্ডার থাকায় ঝুঁকিও একটু ছিল। বরং দি মারিয়ার পায়ে বল ঠেলে গোলের নিশ্চয়তা চেয়েছেন।

এই হলো ম্যারাডোনা আর মেসির আর্জেন্টিনার পার্থক্য। ’৮৬-এর দলে বুরুচাগা-ভালদানো ছিল যাঁদের গোলে আর্জেন্টিনা অনায়াসে গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে গিয়েছিল। নকআউটে শুরু হয়েছিল ম্যারাডোনা-ম্যাজিক। তাও আবার তাঁর গোল ছাড়াই পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে ফাইনাল জয়! ২৮ বছর পর লিওনেল মেসি এটা ভাবতেই পারেন না। সামগ্রিকভাবে দলের সংগতি এত কম যে হয় তাঁর গোল করতে হবে নইলে জাদুকরী পাস বাড়াতে হবে। কত কঠিন প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে মেসি আর্জেন্টিনার ঝাণ্ডা উঁচিয়ে ধরেছেন। ’৮৬-র বিশ্বকাপজয়ী ভালদানোর চার গোল থাকলেও চার ম্যাচ শেষে মেসির দলের সতীর্থ ফরোয়ার্ডের পায়ে কোনো গোল নেই! সুইজারল্যান্ডের ম্যাচে তিনিই গোল তুলে দিয়েছেন দি মারিয়ার পায়ে, যেন মহাযাত্রায় সঙ্গী করতে চেয়েছেন একজনকে। ১১৮ মিনিটে সেই গোলের সঙ্গে সব টেনশন বিসর্জন দিয়ে মেসি জড়িয়ে ধরেন দি মারিয়াকে, ‘আমি খুব নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম শেষের দিকে। আমরা গোল করতে পারছিলাম না, একটি ভুলে সব শেষ হয়ে যেতে পারে। সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমরা পেনাল্টি শ্যুট আউটে যেতে চাই না।’ নিষ্ঠুর টাইব্রেকার ভালো-মন্দ বোঝে না, বড় নির্মমভাবে সে হার-জিতের ফয়সালা করে দেয়। তার আগেই কিছু একটা করতে হবে। অতিরিক্ত সময়ের খেলা শেষ হওয়ার কয়েক মিনিট আগে লিচেসতেইনারের পা থেকে বলটা কেড়ে নিয়ে পালাসিও ম্যাচের সবচেয়ে সুন্দর ও সুফলা মুভের জন্ম দিয়েছেন। তারপর মেসির দৌড় এবং দি মারিয়ার মহামূল্যবান গোল। রিয়াল মাদ্রিদ তারকার বিশ্বকাপে গোল উদ্বোধন হয়েছে এবং এই গোলে আর্জেন্টিনা পৌঁছে গেছে কোয়ার্টার ফাইনালে, ‘আমার চোখ ভিজে গিয়েছিল। এটা আমাদের সবার জন্য এমন একটা মুহূর্ত গোল উদ্‌যাপন করতে সবাই দৌড়াচ্ছে, এমনকি ইনজুরিতে থাকা কুনও (অ্যাগুয়েরোও)। এটাই বলে দেয় আমরা কতটা একতাবদ্ধ।’

দ্বিতীয়ার্ধে তারা দুর্দান্ত খেলে অনেক সুযোগ তৈরি করেছে। ম্যাচ পরিসংখ্যানও তাই বলছে, ২৯টি শটের মধ্যে ২২টি ছিল গোলে। কখনো সুইস গোলরক্ষক বেনাগলিওর প্রতিরোধ কখনো-বা নিজেদের ভুলে বল সুইজারল্যান্ডের জাল খুঁজে পায়নি। দি মারিয়াও চমৎকার খেলেছেন, ১০৮ মিনিটে দুর্দান্ত এক শট নিয়ে পারেননি সুইস গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে। মিনিট দশেক বাদে তাঁর গোলেই হয়েছে আর্জেন্টিনার কোয়ার্টার ফাইনাল আরোহণ, ‘আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গোল এটা, যা সারা জীবনের স্মৃতি হয়ে থাকবে। আমি খুব খুশি, নকআউট রাউন্ডে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গড়িয়েছে- এটা অনন্য স্মৃতি। কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার জন্য মাঠে আমরা সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছি এবং শেষমেশ সফল হয়েছি। প্রথমে ভাগ্য আমাদের সঙ্গে ছিল না, শেষে তার সঙ্গ পেয়েছি।’ মেসির গোল ছাড়া এই প্রথম আর্জেন্টিনা ম্যাচ জিতলেও ম্যাচের সেরা ওই খুদে জাদুকর। নতুন রেকর্ড গড়েছেন তিনি বিশ্বকাপের চার ম্যাচে সেরা হয়ে। সব সময় মূল কারিগর তিনিই, পাশে দু-একজন সতীর্থ থাকলে তাঁর কাজটা সহজ হয়ে যায়। তাঁকে বুঝবে, তাঁর খেলাটা ধরতে পারবে এমন ফুটবলার বাছলে দি মারিয়াই থাকেন এগিয়ে। লা-লিগায় তাঁরা প্রতিপক্ষ, দুজন দুজনের ক্ষমতা সম্পর্কে জানেন- তাঁদের বোঝাপড়াটা হয়ে গেলে দলের আক্রমণগুলো হবে আরো নিখুঁত এবং শানিত।

গ্রুপের খেলায় বিশেষজ্ঞরা যখন দলের সামগ্রিক খেলার মানোন্নয়নের তাগিদ দিচ্ছিলেন। তখন দি মারিয়ার কথা ছিল, ‘চলো, আমরা সবাই মেসিকে সাহায্য করি।’ ক্লাব প্রতিপক্ষ হিসাবে রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড দেখেছেন বার্সা সতীর্থদের পাশে পেলে মেসি কী রকম জ্বলে ওঠেন, কী করে অসম্ভবকে সম্ভব করেন। ওই উপলব্ধিই হয়তো দি মারিয়াকে অনুপ্রাণিত করেছে দলের সেরা খেলোয়াড়কে সাহায্য করতে। বুঝেছেন, চারবারের বিশ্বসেরার সহযোগী হলে নিজেরাও বিশ্বকাপের অংশীদার হতে পারবেন। এই সহযোগিতায় আর্জেন্টিনা নকআউট রাউন্ডের প্রথম ধাপ অতিক্রম করেছে। বাকি আরো তিনটি ম্যাচ