ঢাকা, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪ || ৩ বৈশাখ ১৪৩১
Breaking:
হাছান মাহমুদের সাথে গ্রিসের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক : ঢাকায় দূতাবাস স্থাপন ও জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা     
Mukto Alo24 :: মুক্ত আলোর পথে সত্যের সন্ধানে
সর্বশেষ:
  ‘মুজিবনগর দিবস’ বাঙালির পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন : প্রধানমন্ত্রী        আগামীকাল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস        অনিবন্ধিত ও অবৈধ নিউজ পোর্টাল বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া হবে : তথ্য প্রতিমন্ত্রী        বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কারিকুলাম যুগোপযোগী করার তাগিদ রাষ্ট্রপতির     
১৫৫৯

শহীদ বুদ্বিজীবী দিবসের উপলব্ধি

অধ্যাপক ডা.মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল

প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯  

অধ্যাপক ডা.মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল

অধ্যাপক ডা.মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল

অধ্যাপক ডা.মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল:ডিসেম্বরের ষোল- বাঙালির ইতিহাসে সবচেয়ে গর্বের দিন, আর সেই সাথে আনন্দেরও। কিন্তু ষোল’র আনন্দ ম্লান হয়ে যায় চৌদ্দ’য় এসে। শোকের আবহে বাঙালি অবগাহন করে তার সবচেয়ে বড় বিজয়টিকে প্রতিটি বছর। একাত্তরের ন’টি মাসই গোটা বাংলাদেশ ছিল বিশাল এক বধ্যভূমি। ন’টি মাস জুড়েই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আর তাদের এদেশীয় দোসররা গোটা দেশজুড়ে হত্যা আর ধর্ষণের উন্মত্ততায় মেতেছিল। এর মধ্যেও ১৪ ডিসেম্বর একটু অন্যরকম, অনেক বেশি শোকের। ১৪ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে যে দেশব্যাপী হত্যাযজ্ঞ পাক সেনাবাহিনীর এদেশীয় দোসররা চালিয়েছিল তার প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্নতর।

ডিসেম্বরের শুরুতেই ভারতের অভ্যন্তরে হামলা চালিয়েছিল পাকিস্তানি বিমানবাহিনী। ডুবন্ত মানুষের খড়কুটো আঁকড়ে বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টা ছিল এটি। এর পরপরই সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে যায় ভারত।

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে-ই পাকিস্তানিদের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছিল যে এই যুদ্ধে তাদের পরিণতি কি হতে যাচ্ছে। ইতিহাসে কখনই যা ঘটেনি, যার সাক্ষ্য দেয় না কোন ইতিহাসই কোনোদিনই, তা-ই ইতিহাস হতে চলেছিল।

সম্মিলিত বাংলাদেশ-ভারত মিত্রবাহিনীর কাছে পাকিস্তানের পরাজয় আর স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় যে অত্যাসন্ন এই বুঝ তাদের ততদিনে ভালোই বুঝা হয়ে গিয়েছিল। তারা বুঝতে পারছিল চীনের হস্তক্ষেপ দুরাশা মাত্র আর কোনো কাজেই আসতে যাচ্ছে না মার্কিন সপ্তম নৌবহরও। এ সময় তাদের মূল লক্ষ্যই হয়ে দাঁড়ায় স্বাধীন বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর আর ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য যা কিছু সম্ভব তা-ই করা। আর এই পরিকল্পনার অন্যতম দিক ছিল বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড।


দেশের যারা বিবেক, যারা স্বাধীন দেশকে তাদের বিচার-বুদ্ধি-প্রজ্ঞা দিয়ে সঠিক পথে চালিত করবেন, তাদের অনুপস্থিতিতে দেশটা যে দিকভ্রান্ত হতে বাধ্য, এই অংক তাদের কষাই ছিল। আর তাই আত্মসমার্পণের ঠিক আগে আগে সারাদেশ থেকে দেশের যারা শ্রেষ্ঠ সন্তান, যে সব পেশাজীবীরা নিজ নিজ প্রজ্ঞায় পেশার ঊর্ধ্বে উঠে দেশ ও

দশকে দিকনির্দেশনা দেয়ার যোগ্যতা রাখতেন আর হতে পারতেন স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুর যোগ্য সহচর, তাদের ধরে ধরে নির্বিচারে রায়েরবাজারসহ সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা বধ্যভূমিগুলোতে চরম নির্যাতনের পর হত্যা করেছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এদেশীয় দালালরা।


তাদের এ পরিকল্পনা যে কতটা সফল ছিল তার সবচাইতে বড় প্রমাণ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট। বাঙালির হাতেই বাঙালির ত্রাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারের নির্মম হত্যাকাণ্ড। এই পরের ইতিহাস বড়ই নোংরা আর কদর্য। একুশটি বছর ধরে টানা এদেশের শাসন ক্ষমতায় ছিল মেধাহীন, রুচিহীন পাকিস্তানপন্থী বাংলাস্তানিরা। বিলুপ্ত হয়েছিল সংবিধানের চার মূল স্তম্ভ আর ‘বাংলাদেশ বেতারকে’ ‘রেডিও বাংলাদেশ’ আর ‘জয় বাংলাকে’ ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ বানিয়ে দেশটাকে শুধুই পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল। যে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর সময় ছিল সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধির দেশ, পঁচাত্তরে যার অবস্থান ছিল দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আজকের উন্নত যে কোন দেশের সাথেই তুলনীয়, সেই বাংলাদেশের কাছেই নব্বইয়ের দশকে সিঙ্গাপুর- থাইল্যান্ড-মালয়শিয়া পরিণত হয়েছিল অধরা, স্বপ্নের জগতে।


একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকায় এদেশের এমন কোন পেশা নেই যার সদস্যদের প্রতিনিধিত্ব নেই প্রতিটি পেশার শ্রেষ্ঠ সন্তানরা শিকার হয়েছিলেন বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের। এর মাঝে সংখ্যানুপাতে এগিয়ে চিকিৎসকরা। শতাংশের হিসাব করলে এই পেশারই সর্বোচ্চ সংখ্যক শহীদ, শহীদ বুদ্বিজীবীদের তালিকাকে প্রলম্বিত করেছেন। যে শতাধিক চিকিৎসক একাত্তরের শহীদ বুদ্বিজীবী, তাদের কাউকেই কিন্তু চিকিৎসক হিসেবে তাদের পেশাগত সাফল্য কিংবা চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাদের অবদানের জন্য পাকবাহিনী আর তাদের দোসররা টার্গেট করেনি। তাদের টার্গেট করা হয়েছিল কারণ তারা তাদের পেশার ঊর্ধ্বে ওঠে নিজ নিজ প্রজ্ঞা, মেধা, মননে এমন একটা উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন যে পাকিস্তানিরা শংকায় ছিল যে তারা বেঁচে থাকলে তারা যে শুধু চিকিৎসক হিসেবেই দেশের মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করবেন তা-ই নয়, বরং তাদের দিয়ে দেশের উপকার হবে বহুমাত্রিক। তারা দেশটিকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক স্বপ্নের বাংলাদেশে পরিণত করবেন।

অন্যান্য পেশার মতোই চিকিৎসা পেশাও সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে মেধা, মনন আর প্রজ্ঞার ঘাটতিতে ভুগেছে অনেক। প্রজ্ঞাবান পেশাজীবীরা ক্রমেই সেই শূন্যতাকে পুরণ করেছেন এবং করছেনও। প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। প্রজ্ঞাবান পেশাজীবীদের অকুণ্ঠসহযোগিতা নিশ্চয়ই এর পেছনে ক্রিয়াশীল । কিন্তু তারপরও কেন যেন মনে হয় কোথায় কি নেই? পেশায় প্রজ্ঞার ঘাটতিটা চোখে পড়ে হঠাৎ হঠাৎই। আমার পেশায় আজকে আছেন দেশবরেণ্য চিকিৎসকরা। দেশের ষোল কোটি মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করছেন তারা। দেশের সীমানা পেরিয়ে তাদের অনেকের খ্যাতি দেশের বাইরেও বহুদূর বিস্তৃত। প্রজ্ঞায়, একাডেমিয়ায় আর উদ্ভাবনীতে তাদের অনেকেই উদ্ভাসিত করছেন দেশকে আর এমনকি পৃথিবীকেও।

কিন্তু তারপরেও কিন্তু থেকে যায় যখন দেখি টাঙ্গাইলের বিএমএ’এর নির্বাচিত নেতা মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট অবলীলায় ছিঁড়ে ফেলেন, ভুলে যান যে ঐ মুক্তিযোদ্ধা একদিন রুখে না দাঁড়ালে তিনি আজ অধ্যাপক না হয়ে বড়জোর অধ্যাপকের এমএলএসএস হতেন, তখন খুব বেশি করে মনে পরে শহীদ ডা. আলিম চৌধুরী আর শহীদ ডা. ফজলে রাব্বিদের কথা। অন্ধক্রোধে ইচ্ছা করে চিৎকার করে বলি তুমি, ‘পাকিস্তানের প্রেতাত্মা, কোন অধিকার নেই তোমার আমার পেশাকে অসন্মান করার’ আর কুটি কুটি করে ছিঁড়ে ফেলি হাজার মাইল দূরের ঐ দেশটির মানচিত্রটিকে। একাত্তরে ওরা আমাদের অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দিয়েছিল তাও না হয় মেনে নিলাম, কিন্তু দেশের মেধা আর বিবেকের এত বড় ক্ষতিটা ওরা না করলেও তো পারতো।

লেখক : চেয়ারম্যন, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়,সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ ও কার্যনির্বাহী সভাপতি, বঙ্গবন্ধু গবেষণা সংসদ, কেন্দ্রীয় কমিটি।


মুক্তআলো২৪.কম

আরও পড়ুন
পাঠক কলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত